৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : জুলাই ১৩, ২০২১ ১০:০৫ অপরাহ্ন
করোনায় করুণ পরিণতিতে দেশের পোল্ট্রি শিল্প!
মতামত-ফিচার

পোল্ট্রি খাদ্যের কাঁচামাল, ভ্যাকসিন, মেডিসিন, এন্টিবায়োটিক এবং পোল্ট্রি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রসহ সকল ধরণের আমদানিকৃত পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কবলে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। অপর দিকে পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত পণ্য যেমন একদিন বয়সী ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী বাচ্চার দামে ধস নেমেছে। ধস নেমেছে ব্রয়লার, সোনালী মুরগীর দামেও। ডিমের দাম এখন কিছুটা ভালো থাকলেও গত দেড় বছরের গড় হিসাব করলে ফলাফল ধসের দিকেই যাবে।

ইতোমধ্যে দেশে মাঝারী ও ছোট হ্যাচারীগুলোর প্রায় ৭০% বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার ক্যাপাসিটির অর্ধেক, তিনের এক অংশ, চারের এক অংশ চালিয়ে কোনভাবে টিকে আছে। একইভাবে ব্রয়লার ও সোনালী খামারীরাও তাদের লোকসানের পাল্লা ভারী করতে করতে ব্যাংক ও ডিলারের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে বসে আছে।

পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্য প্রস্তুতকারী ছোট ও মাঝারী ফিডমিলগুলি প্রতিযোগিতায় বড় ফিড মিলারদের সাথে পেরে উঠছেনা। খাদ্যপণ্যের কাঁচা মালের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তার তুলনায় খাদ্যের দাম তেমন বাড়েনি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে করোনা শুরুর আগে ও পরে কাঁচা মালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০-৪৫%, সে তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে ১৫% এর মতো। ফলে এখনও ফিড মিলগুলো লোকসান দিয়ে খাদ্য তৈরী করছে। এতে বড় ফিডমিলগুলো টিকলেও অনেক ছোট ও মাঝারী ফিডমিলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। এদের অনেকেই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

এই শিল্পে বিনিয়োগকারী প্রায় সকলের দেনার দায় হু হু করে বাড়ছে। ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামীন অর্থনীতি। লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ বেকার হচ্ছে। এভাবেই চলছে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে এই শিল্পে। মনে হচ্ছে এখানে দেখার কেউ নাই । হাল ও মাঝিবিহীন ঝড়ের কবলে টালমাটাল এক নৌকার মতোই এই শিল্পের অবস্থা।

এই যখন অবস্থা তখন সমস্যার মূলে না গিয়ে আমরা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে প্রকৃতপক্ষে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে চলেছি । এই সময়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিএবি, ফিআব, আহকাব, বাফিটা, বিপিআইএসহ সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে একটা খসড়া তৈরী করে তা সরকারি মহলে উপস্থাপন করা এবং সকলের স্বার্থে তা বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।

এখন এক নজরে দেখি পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, রেডি ফিড, প্রিমিক্স, ঔষধ ও ভ্যাকসিনের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারনগুলো-
১। পোল্ট্রি খাদ্যের প্রধান কাঁচামাল ভূট্টা। এই ভূট্টা যা দরকার তার অর্ধেকেরও বেশী আমদানি করতে হয়। কোভিডকালিন সময়ে সারা বিশ্বব্যাপী ভূট্টা উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এগুলো সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, আমদানি-রপ্তানি খরচও বেড়েছে। ফলে সহসা এর সমাধান হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না।

২। পোল্ট্রি খাদ্যে ব্যবহৃত ২য় সর্বোচ্চ কাঁচামাল হলো সয়াবিন মিল। এই সয়াবিন মিলের কাঁচামাল সয়াবিন হলো আমদানির উপর নির্ভরশীল। ভূট্টার মতোই সয়াবিনেরও উৎপাদন কমেছে এবং খরচও অনেকগুণ বেড়েছে।

৩। প্রোটিন কনসেন্ট্রেট বা পোল্ট্রি মিল – পোল্ট্রি খাদ্যে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান। আমদানি নীতিমালায় মিট এন্ড বোন মিল নিষিদ্ধ থাকায় বা কড়াকড়ি আরোপ করায় ফিসমিল ও পোল্ট্রি মিলের উপর চাপ পড়েছে ফলে এগুলোর দাম অনেক বেড়ে গেছে। বন্দরে কাষ্টম জটিলতা, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারনে বন্দর সমূহে নানান সমস্যা, টেস্টে দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি এই সংকটকে আরও ঘণিভুত করেছে । নানান ধরণের টেস্ট, হয়রানি, বিড়ম্বনা, দেন-দরবার ইত্যাদি কারণে আমদানীকারকরাও এসব জটিলতা এবং বন্দরের ড্যামারেজ দিয়ে প্রোটিন কনসেন্ট্রেড এর এলসি খুলতে চাচ্ছে না। ফলে খাদ্য তৈরীর কাঁচামালের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

৪। রাইশ পলিশ, ডিওআরবি, ডিডিজিএস, ডিডিজি, ফুলফ্যাট সয়া, সয়াবিন তেল, লাইমস্টোন, ডিসিপি, এমসিপিসহ সকল প্রকার পণ্যের দাম ২০-৪০% পর্যন্ত বেড়েছে।

৫। কোভিডের কারণে বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি খাদ্যে ব্যবহৃত ভিটামিন, মিনারেল, মিথিওনিন, লাইসিন, অন্যান্য এমাইনো এসিড, টক্সিন বাইন্ডার, এসিডিফায়ার, এনজাইম, পিলেট বাইন্ডার, ফাইটোবায়োটিক,কক্সিডিওস্ট্যাট, এন্টিঅক্সিডেন্ট সহ সকল পন্যের কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ফ্যাক্টরী শাটডাউন-লকডাউন এর কারনে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। যেগুলো চালু আছে সেগুলিও অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমেছে এবং সমান তালে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এগুলোর মূল্য করোনার আগের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ২৫-৪৫% এবং কিছু কিছু আইটেম ১০০-১৫০% পর্যন্ত বেড়েছে।

৬। পোল্ট্রিতে সরাসরি ব্যবহৃত ভ্যাকসিন, ঔষধ সমূহ, ইকুইপমেন্টস ইত্যাদি পণ্যের কাঁচামালের দামও প্রায় ৩০-৫০% পর্যন্ত বেড়েছে। অনেক কাঁচামাল উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরী শাটডাউন-লকডাউন এর কারণে বন্ধ রয়েছে।

৭। আমদানি খরচ বেড়েছে, কনটেইনার এর ভাড়া বেড়েছে। ২০ ফিট কনটেইনার ইউরোপ থেকে আসতো ১৫০০-২০০০ ডলারে,এই ভাড়া এখন বেড়ে ২৫০০-৩০০০ ডলার হয়েছে। একই সাথে বন্দরে কনটেইনার জটে শিপিং ড্যামারেজ, পোর্ট ড্যামারেজ গুণতে হচ্ছে। দেশে বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। করোনার কারণে সঠিক সময়ে মাল পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

৮। সকল ধরণের প্লাস্টিক পণ্য, লৌহজাত পণ্য, স্টীল ইত্যাদি পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট পন্যের দাম ২০-৩০% পর্যন্ত বেড়েছে।

৯। ফিডমিলের আমদানিকৃত সকল যন্ত্রপাতির মূল্য বহুগুণে বেড়েছে।

১০। ব্যাংকগুলো সময় মতো অর্থ ছাড়করনের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। ক্ষেত্র বিশেষ পাস হওয়া লোনের অর্থ ছাড় করছে না। আবার কেউ নতুন করে লোন করতেও পারছে না। অনেক ব্যাংক করোনার কারনে সঠিক সময়ে এলসি খুলতে পারছে না। লেনদেন সীমিত হওয়াতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই শিল্পে।

১১। করোনার কারনে বিভিন্ন নিরব খরচগুলো আগের তুলনায় অনেক গুণে বেড়েছে।

১২। কোভিডকালিন সময়ে ডিএলএস এর এনওসি দেরীতে দেওয়ার কারনেও পন্যের উপর অতিরিক্ত খরচ যোগ হচ্ছে।

১৩। ডলার ও ইউরোর রেটও বেড়েছে।

১৪। ইউরোপ, আমেরিকা, চায়না সহ বিভিন্ন দেশ হতে পন্য আসতে দেরী হওয়ায় ব্যাংকের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৫। পোল্ট্রিতে ব্যবহৃত জীবন রক্ষাকারী ঔষধ এন্টিবায়োটিক সমূহের মূল্য করোনার আগের তুলনায় বর্তমানে প্রায় ২০-৫০% পর্যন্ত বেড়েছে ।

এবার চলুন দেশে উৎপাদিত প্যারেন্টস্টক বাচ্চা, লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালীর বাচ্চা, ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি এবং ডিমের দাম কমে যাওয়ার কারনগুলো বের করার চেষ্টা করি-

১। দেশের ১৩ টি ব্রয়লার জিপি ফার্ম থেকে ব্রয়লার প্যারেন্টস চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে কি পরিমান ব্রয়লার প্যারেন্ট এবং কি পরিমান একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা দরকার এর কোন স্টাডি না থাকায় জিপি আনার ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নাই। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিপি আসছে । এর পরেও কেউ কেউ আবার দেশের বাইরে থেকেও আনছেন। এই অতিরিক্ত জিপি থেকে অতিরিক্ত পিএস বের হচ্ছে। অনেক সময় এই পিএস বাচ্চাগুলো অতি অল্প মূল্যে ব্রীডার ফার্মগুলোতে সেল হচ্ছে,। সেল করতে না পেরে অনেকেই নিজেদের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দাম কম থাকায় বা সেল করতে না পেরে কমার্শিয়াল ব্রয়লার বাচ্চা হিসেবে সেল করছেন। এর ফলে প্যারেন্টস বাচ্চা সেলের ক্ষেত্রে জিপি ফার্ম মালিকদের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।

২। দেশে ব্রয়লার প্যারেন্টস্টক এর পরিমানও চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী ফলে ব্রয়লার বাচ্চার উৎপাদনও অনেক বেশী। ব্রয়লার বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮-৩২ টাকা হলেও গত ২ বছর যাবত গড়ে ১৮-২০ টাকা করে বিক্রয় হচ্ছে। ক্ষতির পরিমান সহজেই অনুমান করা যায়।

৩। লেয়ার প্যারেন্টস এর অবস্থাও একই রকম। একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চার উৎপাদন অনেক বেশী। হ্যাচারীতে একদিন বয়সী লেয়ার বাচ্চার বর্তমান উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০-৩৫ টাকা কিন্তু গত দেড় বছর যাবত বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা করে। এখানেও হ্যাচারী মালিকদের ক্ষতির পরিমান বিরাট অংকের।

৪। দেশে ব্রয়লার ব্রীডারের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে সোনালী জাতের প্যারেন্টস্টক ফার্ম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে । অনেক বড় বড় হ্যাচারীতেও এখন কালার ব্রয়লার এমনকি সোনালী জাতের বাচ্চাও উৎপাদন করছে। এগুলোর দামও গত ২ বছরে গড়ে ১০-১২ টাকা করে বিক্রয় হচ্ছে। এখানেও হ্যাচারী মালিকদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

৫। বাণিজ্যিক ব্রয়লার মুরগি ৮৫-১০৫ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে। যার উৎপাদন খরচ এখন কেজি প্রতি প্রায় ১০৫ টাকা চেয়ে বেশী। সোনালী চিকেন ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে যা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। এর সাথে রিজেক্ট লেয়ার প্যারেন্টস, রিজেক্ট লেয়ার, রিজেক্ট ব্রয়লার প্যারেন্টস, রিজেক্ট সোনালী প্যারেন্টসও প্রচুর মার্কেটে।

৬। ডিমের দাম দীর্ঘদিন প্রতিটি ৪-৫ টাকা ছিল, সম্প্রতি একটু দাম বেড়েছে। তবে খাদ্যের দাম তুলনা করলে এখানেও মূলধন নিয়ে টানাটানি অবস্থা। করোনাকালিন সময় হিসেব করলে গড়ে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৬.৫০ টাকার চেয়ে বেশী। আর বর্তমান সময়ের খরচ হিসেব করলে তা হবে ৭.৫০ টাকার মতো।

৭। এর পাশাপাশি ব্রয়লার প্যারেন্টস, লেয়ার প্যারেন্টস, লেয়ার এবং সোনালী সহ প্রায় সকল মুরগিতে এইচ৫, এইচ৭, এইচ৯ সহ নানা জটিল রোগে ১৫-২০% মুরগি মারা যায় যার হিসেব টানলে সকল উৎপাদিত পণ্যের উপর আরও ১৫-২০% উৎপাদন খরচ বেশী হবে।

এখন দেখা যাক উৎপাদিত ব্রয়লার, সোনালী, লেয়ার, ডিমের দাম দীর্ঘদিন যাবত কম থাকার মূল কারন হলো – কোভিড১৯ বা করোনা –
১। করোনার কারনে হোটেল, রেস্তোরা, শপিংমল, পর্যটন এলাকাগুলো দীর্ঘদিন যাবত প্রায় বন্ধ বললেই চলে। কিছু সময় চললেও লোকজন খুবই কম। এগুলোতে অবস্থিত ক্যাফে, হোটেল গুলোতে ডিম, মুরগিই ছিল প্রধান আইটেম।

২। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে সেখানকার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ডাইনিং বন্ধ। স্কুলের পিকনিক, শিক্ষা সফর, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, রাজনৈতিক কর্মকান্ড, গেটটুগেদর, এলামনাই, রি-ইউনিয়ন, সামাজিক কর্মকান্ড, খেলা-ধুলা বন্ধ থাকায় এখানে আর ব্রয়লার, চিকেন, ডিম লাগে না।

৩। স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ। এই সকল অনুষ্ঠানে ডিম, মুরগিই ছিল প্রধান খাবার।

৪। বিয়ে-সাদী, জন্মদিন, বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, খেলা-ধুলা, ধর্মীয় উৎসবে আগের মতো আর লোকজনের যাওয়া আসা নাই। এগুলো অনুষ্ঠানে প্রচুর ডিম, মুরগি লাগতো।

৫। দেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিছিল, মিটিং বন্ধ আছে। এখানেও অনেক মুরগি, ডিম লাগতো।

৬। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরের বছর ব্যাপী কোন না কোন এক্সিবিশন/মেলা হতো যা করোনার পর থেকে বন্ধ আছে। এখানে প্রচুর ডিম ও মুরগি লাগতো।

৭। বিমানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ আছে। বিমান বন্দরে, বিমানের খাবারে চিকেন একটা কমন আইটেম যা এখন আর লাগে না।

৮। বিস্কুট, চিপস, ফাস্ট ফুড উৎপাদনে এখন আর আগের মতো চিকেন আর ডিম লাগে না কারন এগুলোর চাহিদা কমে গেছে।

৯। নতুন নতুন ফ্যাক্টরী স্থাপন, সিভিল কার্যক্রম, ইন্সটলমেন্টের কাজ অনেক কমে গেছে।

১০। করোনার কারনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। লকডাউনের কারনে অনেকের আয় নাই বললেই চলে। অনেকেই পূর্বের জমানো অর্থ থেকে খুব হিসাব নিকাশ করে চলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠান তাদের জনবল কাটসাট করেছে এবং নতুন কোন নিয়োগ না হওয়াতে বেকারের সংখ্যা আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় মানুষ তার চাহিদার তুলনায় অনেক কম খরচে চলার চেষ্টা করছে।

১১। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া গুলোতে তেমন একটা প্রচার প্রচারনা নাই। কোভিড প্রতিরোধে চিকেন ও ডিমের কোন বিকল্প নাই এই বিষয়টি আমাদের মন্ত্রনালয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ডাক্তার, পুষ্টিবিদদের মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারনার অভাব।

এই সকল কারনগুলো ছাড়াও আরও অনেক মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনি সাজিয়ে ভোক্তাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে প্রায়শই আমাদের এই শিল্পকে ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়।

আমি এতোক্ষণ ধরে যা বকবক করে লিখলাম তা কম বেশী সকলেরই জানা আছে, তবে আমাদের সাধারন ভোক্তা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে খামারীদের নজরে এ বিষয়গুলো পৌঁছাতে পারলে অন্তত তারা জানতে পারবে আসল বিষয়টা কি । অতীব দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি আমার এই লেখা আমাদের লোকজন ছাড়া সাধারন মানুষ ও ভোক্তাদের কাছে পৌছঁবেনা।

এখানে একটা বিষয় পরিস্কার করা দরকার- বড় বড় হ্যাচারী/ব্রীডার ফার্ম/ফিডমিলার মিলে গোটা বিশেক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমান টোটাল বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক। তারা নিজেদের প্যারেন্ট, নিজেদের লেয়ার, নিজেদের ব্রয়লার, নিজেদের ফিড নিজেরাই ব্যবহার করে এবং উৎপাদিত ডিম, মুরগি সরাসরি বিপননের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে তাদের সাথে মাঝারী ও ছোট হ্যাচারী,ফার্ম, ফিডমিলারগন কখনও পেরে উঠবে না। একজন বড় ফিডমিলার সিজনের সময় প্রায় ৬-৭ মাসের ভূট্টা, সয়াবিন কিনে রাখেন। কাজেই তাদের সাথে তুলনা দিয়ে কোন লাভ নেই।

তবে এসোসিয়েশনগুলো চাইলে, সরকারের সহযোগীতা নিয়ে দেশের মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা চিন্তা করে জিপি, পিএস এবং ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালীর চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও বিপননের ব্যবস্থা করতে পারলে হয়তোবা করোনা উত্তর সময়ে টিকে থাকা সম্ভব হবে। অন্যথায় বিরাট একটি অংশ মূলধন খুইয়ে ফকির হবে। অপর দিকে গুটি কতক প্রতিষ্ঠানের মালিকগন আমির হয়ে যাবে।

আমার দেখা গত ১৮ বছরে দেশের হাজার হাজার খামার মালিক তাদের ব্যবসা যেমন গুটিয়ে নিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে দেশী বিদেশী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে যে পরিমান লেয়ার প্যারেন্ট, লেয়ার মুরগি, ব্রয়লার প্যারেন্ট, সোনালী প্যারেন্ট বিক্রি হয়ে গেছে তাতে আগামী ২/৩ মাস যারা টিকে থাকবে তারা ঠিকই ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবে। একই ঘটনা ফিড মিলগুলোর বেলায়ও। তখন নতুন আরেকটা শ্রেণি আসবে যারা রাতারাতি লাভ করে বড় হওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকবে। কিন্তু আখেরে তাদের পরিণতিও একই রকম হবে। অর্থাৎ একটা শ্রেণি সব সময় টিকে থাকবে এবং ধীরে ধীরে তারা এক সময় দেশে সমস্ত মুরগির খাদ্য, ডিম, মুরগি উৎপাদন করবে এবং একচেটিয়া সেক্টর নিয়ন্ত্রন করবে। আরেকটা শ্রেণি নগদ লাভ নামক মরীচিকার আশায় পালা বদল করতে থাকবে।

ঔষধ কোম্পানীর বেলায়ও একই অবস্থা হবে। আমাদের সরকারগুলোর ভূমিকা হলো আমার আম ছালা দুইই চাই। উৎপাদনও বেশী চাই এবং জনগনকে সস্তায় খাওয়াতেও চাই। আর উৎপাদনতো কেউ না কেউ করবেই। মরে হোক আর বেঁচে হোক। সব মিলিয়ে সেক্টরের অবস্থা ভালো বলতে পারা খুব কঠিন ।

আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে, আমার এই লেখা দিয়ে শীর্ষ মহলের টনক নড়ানো যাবে কিংবা নড়বে। আমি নড়াতেও চাই না। আমাকে গত ১ মাস ধরে বেশ কিছু প্রিয় মানুষ ফোন করে এই শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কি জানতে চাওয়ায় তাদের জন্যই এই লেখাটা। এই কঠিন অবস্থা থেকে খুব সহসা আমরা বের হতে পারবো এমনটা প্রত্যাশা করা কঠিন। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিজেদের শিল্পকে স্থানীয়ভাবে এবং করপোরেট পর্যায়ে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনে জাতীয়ভাবে কিছু বাস্তব এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তাহলে হয়তো করোনা উত্তর পৃথিবীতে আমরা সকলে টিকে থাকতে পারবো।

তাই বলতে পারি – করোনায় করুণ পরিণতিতে দেশের পোল্ট্রি শিল্প।
বেশী বেশী ডিম ও মুরগি খান
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
মাস্ক পড়ুন, টিকা নিন।
করোনা থেকে মুক্ত থাকুন।

 

লেখক :

ডাঃ মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান
ন্যাশনাল পোল্ট্রি কনসালটেন্ট ও

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস্ লিঃ

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ১০, ২০২১ ৪:০১ অপরাহ্ন
কোরবানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে চামড়াশিল্প
মতামত-ফিচার

।।শাইখ সিরাজ।। বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের তুলনায় সমৃদ্ধ হলেও বহু সাধারণ মানুষ এখনো দিন আনে দিন খায়। দীর্ঘ লকডাউন এ মানুষকে সীমাহীন কষ্টে ফেলে দিয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি সংক্রমণ রোধে লকডাউন দেওয়ার বিকল্পও কিছু ছিল না। যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে তা সত্যিকার অর্থেই ভয়জাগানিয়া। এদিকে এগিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। এ ঈদ ঘিরে বাংলাদেশের বহু খামারি স্বপ্ন বুনেছেন। দ্বিতীয়বারের মতো আমরা করোনার মাঝে কোরবানি ঈদ পাচ্ছি। গত কোরবানি ছিল একেবারেই ভিন্নরকম।

করোনার ভিতর ঈদের আনন্দের চেয়ে শঙ্কা ছিল বেশি। কোরবানির সঙ্গে কৃষি অর্থনীতির পাশাপাশি যুক্ত রয়েছে চামড়াশিল্পও। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল সেখানে যে কোনো গণজমায়েতই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। যেখানে করোনা পরিস্থিতির কারণে হজ ও মসজিদে নামাজের ক্ষেত্রেও নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সেখানে এ পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে কোরবানির বাজার নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পিত প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

গত বছর সরকার-সংশ্লিষ্টরা যখন ঘোষণা করলেন স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে বরাবরের মতোই কোরবানির পশুর হাট বসানো হবে, তখন আমি করোনার সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে তাঁদের বিকল্প পথ খোঁজার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘টু দ্য পয়েন্ট’-এর এক আলোচনায় বলেছিলাম কোরবানির পশুর অনলাইন বাজারব্যবস্থা শক্তিশালী ও কার্যকরের জন্য। প্রতিটি ইউনিয়নেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। সরকার চাইলে এ জনশক্তি ব্যবহার করে সহজেই কোরবানির পশুর অনলাইন মার্কেট চালু করতে পারে।

এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম আইসিটি-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা তখন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। সে বছর অনলাইন কোরবানির বাজার বেশ গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রেখেছিল। এ বছরও তাই হচ্ছে। অনলাইনই হয়ে উঠছে কেনাবেচার দারুণ মাধ্যম।

দিনে দিনে পাল্টেছে বাজারের ধারণা। সেই সঙ্গে পাল্টেছে গরু বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়াও। কোরবানি সামনে রেখে প্রতি বছরই ছোট বড় অসংখ্য গরুর খামার গড়ে উঠছে। খামার বাড়ছে। পরিবর্তন এসেছে ভোক্তা ও খামারির ভাবনায়ও। ভোক্তা ও ক্রেতার মধ্যে গরুর মান সম্পর্কে ইতিবাচক সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

এখন স্টেরয়েড বা ক্ষতিকর রাসায়নিক খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণের ব্যাপারটি খুব বেশি নেই। শিক্ষিত মানুষের খামার উদ্যোগে যুক্ত হওয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও গণমাধ্যমের তুমুল তৎপরতায় খামারি, ভোক্তা, ব্যবসায়ী সবাই গরু মোটাতাজাকরণের ইতিবাচক ধারণাটি পেয়ে গেছেন।

অথচ কয়েক বছর আগেও দেখেছি শুধু টাকার লোভে অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে বহু খামারি ও ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এখন স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুর স্বভাব দেখে সব ক্রেতাই চিনতে পারেন। এজন্য খামারিরাও অধিক সতর্ক হয়ে উঠেছেন। গত কয়েক বছরে দেখেছি কোরবানির সময় রাসায়নিক প্রয়োগের সন্দেহে যেসব গরু বিক্রি হয়নি সেগুলোর মধ্যে অনেক গরুই হাটেই মারা গেছে। কারণ রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে গরুর শরীরে যে বাড়তি পানি জমে তা একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বিষক্রিয়া করে। যা গরুর বেঁচে থাকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

বিষয়গুলো এখন সচেতন খামারিদের কাছে পরিষ্কার। তারা বেশি বিনিয়োগ করে খামার গড়ছেন তাদের কাছে বিষয়টি বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বিশুদ্ধ খাদ্য দিয়ে গরু মোটাতাজা করতে।

টেলিভিশন প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এমনই কয়েকজন উদ্যোক্তার দেখা পেলাম গত কয়েক দিনে। যেমন ঢাকার অভিজাত এলাকার মানুষের চাহিদা বিবেচনায় প্রকৌশলী মকবুল হোসেন গড়েছেন গরুর খামার। তিনি শুরু করেছিলেন গাভি পালন দিয়ে। পরে যুক্ত করেন বিশুদ্ধ উপায়ে দেশি পদ্ধতিতে মাংসের গরু পালন। বললেন, অনলাইনেই বেচা হয়ে যায় সব। লাইভ ওয়েটে কেজি দরে বিক্রি করেন। দেখলাম গরুগুলো বেশ তাজা এবং চঞ্চল।

প্রকৌশলী মকবুল হোসেনের মতো অনেকেই কোরবানি ঘিরে গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় অনেক খামার। কোনো কোনো খামার বিশাল, একেবারে শিল্পকারখানার আদল। কেউ কেউ দুটি-তিনটি করে গরু লালনপালন করে কোরবানিতে বাড়তি আয়ের একটা চেষ্টা করে চলেছেন। আবার কোনো কোনো খামার দেখলেই মনে হয় যেন গরু মোটাতাজাকরণের কুটিরশিল্প। ছোট্ট আকারে শুরু হলেও বাণিজ্যের প্রসারে এও যে একসময় বিশাল হয়ে উঠবে তার ধারণাও পাওয়া যায়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি। আসন্ন ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। গত বছর গবাদি পশু প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৭টি। বোঝাই যাচ্ছে ক্রমেই বড় হচ্ছে কোরবানির পশুর বাজার। ফলে তরুণ খামারিরাও যুক্ত হচ্ছেন গরু মোটাতাজাকরণে।

এমনই এক তরুণ খামারি সাইদুর রহমান শিমুল। মেঘনার তীরে নরসিংদী পৌরসভার কামারগাঁওয়ে গড়ে তুলেছেন তার গরুর খামার। শিমুল পেশায় শিক্ষক, করোনার এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং নিরাপদ খাদ্যের তাগিদ থেকেই যুক্ত হয়েছেন কৃষি খামারে। শিমুলের খামার গড়ে তোলার গল্পটা দারুণ। শিক্ষক বলেই এ সময়ের বাচ্চাদের তিনি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, তাদের শৈশবে তারা যেমন দুরন্ত ছিলেন, উচ্ছল ছিলেন এই বাচ্চারা ঠিক সে রকম নয়।

তিনি অনেক কারণের একটা বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন অনিরাপদ খাদ্যব্যবস্থাকে। চিন্তা করছিলেন কীভাবে তার ছাত্র-ছাত্রী, সন্তানের মুখে নিরাপদ খাদ্য তুলে দেবেন। সেই তাগিদ থেকেই প্রথমে যুক্ত হন ফসল কৃষির সঙ্গে। এর মাঝে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত যশোরের মাহবুবুল ইসলামের ভুটানি বক্সার গরুর প্রতিবেদন দেখে সেই গরু লালনপালনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পাঠক, আপনাদের মনে থাকতে পারে বছর চারেক আগে যশোরের মাহবুবুল ইসলামের ভিন্ন রকমের গরু-ছাগলের খামার নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেছিলাম। সেখানে মাহবুবুল ইসলাম নানারকম ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এবং খাটো জাতের ভুটানি বক্সার গরু লালনপালন করছিলেন বেশ সাফল্যের সঙ্গে। সে প্রতিবেদন দেখে শিমুলও খুঁজতে থাকেন ভুটানি বক্সার।

একদিন খবর পেলেন ভারতের সীমান্তের সীমান্তরক্ষীরা কিছু ভুটানি গরু নিলামে তুলেছেন। ছুটে গেলেন। না, ভুটানি বক্সার নয়, সেই গরু মূলত ভুটানি ভুট্টি জাতের। এও ছোট আকৃতির এক গরু। সেখান থেকে ২৬টি গরু তিনি নিলামে কিনে নিয়ে আসেন। এর সঙ্গে গরু মোটাতাজাকরণের একটা খামার গড়ে তোলার স্বপ্নও যুক্ত হয় শিমুলের।

আগেই বলেছি শুধু শখের বশে নয়, নিরাপদ খাদ্যের তাগিদ থেকে শিমুল যুক্ত হয়েছেন কৃষি উদ্যোগের সঙ্গে। তাই গরুর খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি বেশ সচেতন। নিজেই গরুর খাবার তৈরি করেন। ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেন জার্মানি হাইব্রিড ঘাস। আর নিজের জমিতে চাষ করা ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেন দানাদার খাবার। শিমুলের মতো অজস্র খামারির হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পশুসম্পদ খাত।

দেশে প্রতি বছর গবাদি পশুর খামারির সংখ্যা বাড়ছে। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের পর ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গবাদি পশু লালনপালনে উদ্যোগী হন। করোনার এই সময়ে এসে সেই সংখ্যাটা বেড়েছে। এ উদ্যোক্তার প্রায় ৮০ শতাংশই তরুণ, বলা চলে শিক্ষিত তরুণ। অনেকে মূল পেশার পাশাপাশি গবাদি পশুর খামার গড়ে তুলছেন। প্রাণিসম্পদে জোয়ার আসবে আমাদের দেশে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দেশে উৎপাদিত মাংসের বাজার ছড়িয়ে দিতে নিতে হবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। তবেই আরও সমৃদ্ধ হবে খামারশিল্প, সমৃদ্ধ হবে দেশ। করোনা মহামারীর এই সময়ে সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
[email protected]

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ৯, ২০২১ ২:৪১ অপরাহ্ন
আর্সেনিকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়…
মতামত-ফিচার

কামরুল হকঃ বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল। এক সময় নদীই ছিল মানুষের প্রধান পানির উৎস। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সভ্যতা, শহর বন্দর গ্রাম। কালের পরিক্রমায় মানুষ নদী বিধৌত অঞ্চল থেকে জীবিকার তাগিদে সরে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি পাত কমে গেছে। মানুষ ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পানির দিকে ঝুঁকেছে। গভীর ও অগভীর নলকূপ এখন মানুষের পানির চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে। এসব নলকূপ একদিকে যেমন পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেছে, অপর দিকে বাড়িয়েছে আর্সেনিক আক্রান্তের সম্ভবনা।

সব পানিতেই আর্সেনিক থাকে। তবে আমাদের শরীর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই বিষাক্ত উপাদান সহ্য করতে পারে। বাংলাদেশে নলকূপের প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম এর নিচে আর্সেনিক থাকলে তাকে সুপেয় পানি হিসেবে ধরা হয়। দেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে চাপাই নবাবগঞ্জে অগভীর নলকূপের পানিতে। এরপর একে একে সারাদেশেই আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এর প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের সহায়তায় সরকার দেশের ৬১টি জেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ৪২% নলকূপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি এবং ২৫% নলকূপের পানিতে বাংলাদেশের মানের চেয়ে বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি খুঁজে পায়। এরপর সরকার দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় নিরাপদ খাবার পানির বিভিন্ন প্রকল্প হতে নেয়। দীর্ঘমেয়াদী এসব প্রকল্প নিরাপদ খাবার পানি সংগ্রহে মানুষকে সচেতনতা করে তুলেছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেচের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতির ফলে খাদ্য শস্যে ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় এই বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। যত্রতত্র অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়ায় বাড়ছে আর্সেনিক আক্রান্তের ঝুঁকি।

দেশে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং উজানে নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎস মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুকিয়ে গেছে বেশির ভাগ খাল বিল। দেশের বড় বড় নদী ছাড়া আর সব নদীই আজ মৃত প্রায়। অগভীর নলকূপ স্থাপনে খরচ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সেচকাজে অগভীর নলকূপ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব নলকূপ স্থাপনে যেসব নীতিমালা আছে অনেক ক্ষেত্রেই তা যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। ফলে না জেনে না বুঝেই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে দেশের মানুষ।

 

ঝুঁকি এড়াতে করণীয়:

১. অগভীর ও গভীর নলকূপ স্থাপনে নীতিমালা কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। সেচ কাজে অগভীর নলকূপের পানির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহারে উৎসাহিত করা। আর্সেনিক পরীক্ষা সহজলভ্য করা।

২. দখল হয়ে যাওয়া নদী খাল বিল উদ্ধার করে পুণঃখনন এবং দূষণ মুক্ত করে পানি সেচ কাজের উপযোগী করে তোলা। বিদ্যমান সেচ প্রকল্প গুলো আরও জোরদার করা।

৩. মৃত নদী ও খাল খনন করে কৃত্রিম জলাধার তৈরী মাধ্যমে সেচ কাজে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎস সহজলভ্য করা। প্রয়োজনে আন্তঃনদী সংযোগ খাল খনন করে খরাপ্রবণ ও উচু এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা।

৪. বিএডিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহারে করা।

৫. গভীর নলকূপ স্থাপনে সরকারী ঋণ এবং ভর্তুকি সহজ করা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ সকল ব্যাংকে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে, কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা করা।

৬. জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী গণমাধ্যমের সহয়তায় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে পর্যায়ে প্রচারণার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে প্রশাসন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা।

৭. অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে উজানের দেশের সাথে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্ত হওয়া। তিস্তা ও পদ্মা নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির তীব্র সংকট তৈরী হয়। পদ্মার পানি চুক্তি বাস্তবায় ও তিস্তার পানি চুক্তির কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

আর্সেনিক একটি ক্ষতিকর ভারী মৌল। দীর্ঘদিন গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক দূষিত পানি পান করলে বিভিন্ন চর্মরোগ সহ ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সারা বিশ্বেই সুপেয় পানির উৎসে আর্সেনিকের উপস্থিতি জটিল সমস্যা তৈরী করেছে। সচেতনতাই পারে এই বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলা করতে। খাবার পানির নিরাপদ উৎসের পাশাপাশি সেচে কাজে ব্যবহৃত পানিও আর্সেনিক মুক্ত উৎস থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী।

 

লেখকঃ

কামরুল হক

বিএসসি এজি (সিকৃবি)
এমএস ইন হর্টিকালচার (রাবি)

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ৫, ২০২১ ৩:০১ অপরাহ্ন
করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হলে প্রোটিন গ্রহণের পরিমান বাড়াতে হবে
প্রাণিসম্পদ

শিশু ও প্রবীণদের জন্য প্রোটিন খুবই দরকারি

লেখকঃ ড. খালেদা ইসলাম, অধ্যাপক, পুষ্টিও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ মহামারি অসংখ্য মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। যারা বেঁচে গেছেন তাঁদের শরীরেও রেখে যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব। এ জীবানু ক্রমাগতভাবে মিউটেট হওয়ার ফলে পরিস্থিতি দিন কে দিন অবনতি হচ্ছে। বর্তমানে ডেল্টা ভেরিয়ান্ট এবং ডেল্টা প্লাস ভেরিয়ান্ট নতুনভাবে আতংক ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভাইরোলজিস্টরা একদিকে যেমন নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিন গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অন্যদিকে তেমনি ইমিউনিটি বা এন্টিবডি বাড়াতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।

ভাইরোলজিস্ট ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, ভাইরাসজনিত যে কোন রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে দরকার এন্টিবডি। জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে যার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যত বেশি, সুরক্ষিত থাকার কিংবা জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার সম্ভাবনাও তার ততই বেশি।

প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সারা পৃথিবীর মানুষ। আগামীকাল কী হবে সে কথা না ভেবে এখন তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা- করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ থাকতে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ফল, টাটকা শাকসব্জি, ইত্যাদি পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল আছে- যা প্রাকৃতিকভাবেই দেহে ইমিউনিটি তৈরি করে। এছাড়াও তৈরি করে ‘এন্টিজেন’ – যা করোনার মত ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি গঠনে সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রোটিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষায় প্রোটিন কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। দেহে প্রোটিন বা আমিষের অভাব থাকলে জীবানু খুব সহজেই আক্রমণ করতে পারে। গুনগত ও মানগত বৈশিষ্টের দিক থেকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের তুলনায় প্রাণিজ প্রোটিন রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।

ভারতের প্রখ্যাত ভাইরাস বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সিদ্ধার্থ জোয়ারদার অধিক পরিমাণে প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অধ্যাপক জোয়ারদারের বক্তব্য হচ্ছে, “শরীরের দরকার প্রাণিজ প্রোটিন। সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায়- মুরগির মাংস ও ডিম থেকে। মাংস না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হবে। তাতে করোনা ভাইরাস শুধু নয়, মানবদেহে অন্য যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই পর্যাপ্ত প্রোটিন খেতে হবে।”

বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেছেন- “উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার যেমন: ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন দৈনিক সমকালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- প্রাণিজ আমিষ যেমন গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে লাইসিন, মিথিয়োনিনসহ বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ কম্পোনেন্ট পাওয়া যায়। সিসটেইন ও মিথিয়োনিন রূপান্তরিত হয় গ্লুটাথিয়নে- যা দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

অধ্যাপক আল-মামুন আরও বলেন- ডিমে প্রাপ্ত কলিন এবং ট্রিপ্টোফেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অবস্থাতেও মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধিতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর দুধে প্রাপ্ত প্রোবায়োটিক, ভিটামিন ‘ডি’ এবং ইমুনোগ্লোবিন মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। তাঁর মতে, করোনায় যেহেতু কোনো কার্যকর চিকিৎসা আপাতত নেই, তাই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই উত্তম।

অধ্যাপক আল-মামুন জানান, ব্রয়লার মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২সহ ভিটামিন এ, ডি, ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে- এখন পর্যন্ত করোনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ছিল দুর্বল এবং তাঁরা বিভিন্ন রোগ যেমন ঠান্ডা, ফুসফুসজনিত সমস্যা, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সুতরাং করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর এটি সম্ভব বেশি বেশি প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের মাধ্যমে। সুতরাং বেশি করে ডিম, দুধ ও ব্রয়লার মাংস খাই, করোনার ঝুঁকি কমাই (দৈনিক সমকাল, অন্যদৃষ্টি, ১৮ এপ্রিল ২০২০)।

 

বয়সকালে শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাদ্য কমিয়ে প্রোটিন গ্রহণ বাড়াতে হবে

প্রোটিন সবসময় সঠিক অনুপাতে গ্রহণ করলে বার্ধক্য জীবনে শারীরিকভাবে অনেক ভালো থাকা সম্ভব। দেহের রোগপ্রতিরোধের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও অনন্য সাধারণ ভূমিকার কাজটি করে থাকে প্রোটিন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে একজন মানুষের হাড়ক্ষয়, বিপাকক্রিয়ার ধীরগতি, দাঁতে সমস্যা, শারীরিক দুর্বলতা, খুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য নানারকম জটিলতা দেখা যায়। যদিও প্রোটিন-চাহিদা নির্ভর করে মানুষের কাজের ধরণ, ওজন এবং শারীরিক অসুস্থতার উপর, তবুও বৃদ্ধ বয়সে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো হতে হবে। যেহেতু এই বয়সে কর্মচাঞ্চল্য কম থাকেনা, কাজেই এই সময় শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমান কমিয়ে অধিক পরিমানে আমিষ খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পেশীর ক্ষয়রোধ ও হাড় মজবুত রাখার জন্য সঠিক পরিমানে প্রোটিন পথ্য হিসেবে কাজে লাগে। এই বয়সে আমিষের অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানান ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

 

শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে দরকার ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস

প্রোটিন- কোষ বৃদ্ধিতে এবং দেহ কাঠামো গড়তে সাহায্য করে। শিশুর জন্য প্রোটিনের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে আমিষ অসাধারণ ভূমিকা রাখে। পুষ্টিবিদদের মতে, শিশুদের প্রোটিনের পরিমাণ প্রতিদিন ১৬ গ্রাম থেকে ৬০ গ্রাম হতে পারে। একজন শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিদিন একটি ডিম, এক গ্লাস দুধ এবং একদিন পর পর মাছ ও মুরগি মাংস খাবার তালিকায় রাখতে হবে। আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আমিষের অনেক তাৎপর্য রয়েছে। শিশুদের কোনভাবে আমিষের অভাব হলে নানাবিধ রোগ হতে পারে; যেমন- কোয়াশিয়রকর (শরীর ফুলে যাওয়া, ত্বক শুকনো ও খসখসে হয়ে যাওয়া), ম্যারাসমাস (হাত-পা সরু হয়ে যাওয়া, বৃদ্ধের মতো দেখানো), ইত্যাদি।

তাই সুস্থ যদি থাকতে চান চাহিদা মতো প্রোটিন খান।

 

প্রোটিন সচেতনতায় : বিপিআইসিসি ও ইউ.এস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল
শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুন ২০, ২০২১ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
ছোট কানাকুক্কা
প্রাণ ও প্রকৃতি

ড. আ ন ম আমিনুর রহমান।। বালি হাঁসের প্রজনন-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে গেলাম ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সারাটা দিন বিলে ঘুরে ঘর্মক্লান্ত দেহে পড়ন্ত বিকেলে বিলের পাশের পুকুর ও খালের মাঝের রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম। কিছুটা দূরে সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে আমাদের নিয়ে মৌলভীবাজার যাবে বলে।

সহকর্মী ড. জীবন চন্দ্র দাস, ড. সদরুল ইসলাম ও প্রয়াত বন্যপ্রাণীপ্রেমী তানিয়া খানের সঙ্গে গল্প করতে করতে এগোচ্ছি। হঠাৎই খালপাড়ের ঢোল কলমির ঝোপ থেকে খয়েরি-কালো কিছু একটা উড়ল। আলো বেশ কমে গেছে। তবুও এক টিপে কয়েকটা ক্লিক করলাম। পাখিটি আবার ঝোপের গভীরে হারিয়ে গেল। আর বের হলো না। কাজেই প্রথমবার দেখা পাখিটির সাক্ষী ছবি নিয়েই খুশি থাকতে হলো।

২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর কক্সবাজারের ইনানিতে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে একই প্রজাতির একটি পাখিকে উড়ে যেতে দেখলাম। কিন্তু এবারও ছবি তুলতে পারলাম না। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর পড়ন্ত বিকেলে ওকে আবার দেখলাম রাজশাহীর পদ্মা নদীর চর মাজারদিয়ারে। কিন্তু ফলাফল একই; আবারও ছবি তুলতে ব্যর্থ হলাম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির বিকেলে অবশেষে পাখিটির কিছু ভালো ছবি তুলতে সক্ষম হলাম শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলের সেই একই জায়গা থেকে, যেখানে প্রথমবার পাখিটিকে দেখেছিলাম দীর্ঘ সাড়ে আট বছর আগে। এটি ২০১২ সালের সেই পাখিটিরই বংশধর হবে হয়তো। মনটা খুশিতে ভরে উঠল।

এতক্ষণ যে পাখিটির গল্প বললাম, সে এদেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি ছোট কানাকুক্কা। ছোট কুকো, কুক্কা বা ছোট কুবো (পশ্চিমবঙ্গ) নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Bengal Coucal বা Lesser Coucal। বৈজ্ঞানিক নাম Centropus bengalensis। পাকিস্তান ও মালদ্বীপ বাদে ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে পাখিটির দেখা মেলে।

ছোট কানাকুক্কা বড় কানাকুক্কার খুদে সংস্করণ। দৈর্ঘ্যে পুরুষ ও স্ত্রী যথাক্রমে ৩১ ও ৩৪ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে ওজন ৮০-৯২ গ্রাম। প্রজননকালে খয়েরি ডানা বাদে পুরো দেহ চকচকে কালো পালকে মোড়ানো থাকে। তবে ডানা ও কাঁধে প্রায়ই হলুদ ডোরা দেখা যায়। চোখের রং গাঢ় বাদামি। চঞ্চু খাটো ও হলদে। পা, আঙুল ও নখ কালচে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রজননহীন পাখির কালো পালক হলদে-বাদামিতে রূপান্তরিত হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে প্রজননহীন বয়স্ক পাখির মতোই; তবে ডানা-লেজের ডোরা ছাড়াও দেহের উপরিভাগে কালো ছিটের উপস্থিতি চোখে পড়ে।

ছোট কানাকুক্কা মিশ্র চিরসবুজ বা পত্রঝরা বন, বনের চারপাশ, জলার পাশের ঝোপজঙ্গল ও ঘাসবনের বাসিন্দা। দিবাচর পাখিগুলো সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। অল্প উঁচুতে দুর্বলভাবে উড়ে। ঘাসফড়িং, বড় কীটপতঙ্গ ও ছোট সরীসৃপ এদের প্রধান খাদ্য। সচরাচর ‘পুপ-পুপ-পুপ-টোটক-টোটক…’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে অক্টোবর প্রজননকাল। এ সময় ভূমির কাছাকাছি ঘন ঝোপে লতাপাতা ও শিকড় দিয়ে গোলাকার বাসা বানায়; যার একপাশে থাকে প্রবেশপথ। স্ত্রী সাদা রঙের ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৪-১৯ দিনে। স্ত্রী-পুরুষ পালাক্রমে ডিমে তা দেয় ও ছানাদের যত্ন করে। এদের আয়ুস্কাল প্রায় চার বছর।সূত্র: সমকাল

লেখক :অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মে ৭, ২০২১ ৭:৪৭ অপরাহ্ন
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়া উন্নয়নে খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষণা
মতামত-ফিচার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল প্রধানত চিংড়ি চাষ নির্ভর।এখাকার বিস্তীর্ণ ভূমিতে সারাবছর বেড়িবাঁধ দিয়ে লবণপানি আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করা হয়। সারাবছর জলমগ্ন থাকায় এসব এলাকায় গবাদিপশুর জন্য চারণভূমির ব্যাপক সংকট রয়েছে। গরু-মহিষের মত বৃহৎ আকারের প্রাণীদের খাদ্য চাহিদা ও চারণভূমি উভয়ের প্রয়োজন বেশি হয়।তাই এ অঞ্চলে এদের পালন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ভেড়া উপকূলীয় এলাকার জলবায়ুতে অধিকতর অভিযোজনক্ষম প্রাণী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এদের উপর তেমন প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়না।  তাই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এদের প্রতিপালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়ার উন্নয়নে খুবির এগ্রোটেকনলজি ডিসিপ্লিনের গবেষণা

সাধারণত ভেড়ার রোগবালাই কম হয় এবং আকারে ছোট হওয়ায় খাবারের প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে কম। রাস্তার পাশে, জমির আইলে এবং চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধে যে প্রাকৃতিক ঘাস জন্মায় সেখানে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা চরে এরা সারাদিনের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারে।উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়া অধিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এরা ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দিয়ে থাকে এবং প্রতিবারের ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। এরা গাছের বা ফসলের তেমন ক্ষতি করেনা।এছাড়াও লবণাক্ত এলাকাতে এরা যথেষ্ট সহনশীল বলে পরীক্ষিত।তাই অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সহজে ভেড়া পালনে লাভবান হওয়া সম্ভব।

তবে উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়া আকারে ছোট এবং দৈহিক বৃদ্ধির হার কম সুতরাং বড় জাতের ভেড়ার সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে এ জাতের উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চলমান উপকূলীয় ভেড়া উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন গবেষণা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে।

বর্তমানে এ গবেষণা প্রকল্পের আওতায় মোট ২৬টি সংকর জাতের বাচ্চা উৎপাদিত হয়েছে যদের আকার আকৃতি ও শৌর্য-বীর্যে আকর্ষণীয়। প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ড. সরদার শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।  সহযোগী প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ সফিকুল ইসলাম, প্রফেসর এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা। এছাড়া গবেষক হিসেবে রয়েছেন মাষ্টার্স এ অধ্যায়নরত গবেষক মিস মণীষা দে। এবং গবেষণা সহকারী জনাব মিনহাজুল আবেদীন সান।  ভেড়াদের নিয়মিত দেখাশোনা করছেন প্রতাপ মল্লিক।

 

প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম
প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম

প্রকল্প পরিচালক ড. সরদার শফিকুল ইসলাম এগ্রিভিউ২৪কে বলেন, “বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় জাতের ভেড়া সাধারণত আকারে ছোট হয়, এদের দৈহিক বৃদ্ধির হার কম এবং প্রাপ্তবয়স্ক ওজন কম হয়ে থাকে অর্থাৎ মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম হয়। অতএব উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় জাতের ভেড়ার উন্নয়ন করা দরকার।  এ ক্ষেত্রে উন্নত জাতের পাঠা দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় জাতের ভেড়ীকে পাল দেওয়া হলে, যে বাচ্চা জন্ম নেবে সেটাই হবে সংকর জাতের এবং এদের আকার ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

 

গাড়োল জাতের ভেড়া
গাড়োল জাতের স্ত্রী ভেড়া

বাংলাদেশের মেহেরপুর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলাতে এক বিশেষ ধরনের বড় জাতের ভেড়া দেখা যায় যা স্থানীয়ভাবে গাড়োল জাতের ভেড়া নামে পরিচিত। গাড়োল প্রজাতির ভেড়া আকারে অনেক বড় হয় এবং এদের দৈহিক বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হয়ে থাকে।  এরা দেখতেও সুন্দর হয়, এদের লেজ বেশ খানিকটা লম্বা হয় এবং প্রায় মাটি পর্যন্ত স্পর্শ করে। গাড়োল প্রজাতির পাঠা দ্বারা উপকূলীয় অঞ্চলের ভেড়ীকে প্রজননের মাধ্যমে জাতের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।  উৎপাদিত সংকর জাতের ভেড়া আকারে বড় হবে এবং এদের দৈহিক বৃদ্ধির হারও বেশি হবে। এভাবে একদিকে যেমন ভেড়ার জাতের উন্নয়ন ঘটবে, অন্যদিকে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

 

গাড়োল জাতের পুরুষ ভেড়া
গাড়োল জাতের পুরুষ ভেড়া

তিনি আরও জানান, “প্রাকৃতিক ঘাসের পাশাপাশি ভেড়াকে কি পরিমাণ দানাদার খাবার দিলে এবং দিনে কত ঘন্টা মাঠে চরলে বৃদ্ধির হার সর্বাধিক হবে, একই প্রকল্পের আওতায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। প্রকল্পের ভেড়াগুলোকে পৃথক দলে ভাগ করে আলাদা আলাদা চেম্বারে রাখা হয়েছে।  প্রাকৃতিক ঘাসের পাশাপাশি প্রতিটি দলকে ১০০, ১৫০, ২০০ ও ২৫০ গ্রাম হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ দানাদার খাবার দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রকার দানাদার খাদ্য উপাদান যেমন ভূট্টা ভাংগা, চালের কুড়া, গমের ভূষি, সরিষার খৈল, সয়াবিন মিল, খাদ্য লবণ, ডিসিপি এবং ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স সমন্বয়ে দানাদার মিশ্রণ তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশে প্রাপ্ত জাতের ভেড়া সমূহ  মূলত মাংস উৎপাদনকারী। ভেড়ার মাংস তুলনামূলক নরম সুস্বাদু রসালো হয় এবং এতে কোনো গন্ধ থাকে না।

প্রকল্পের আওতায়ধীন সংকর জাতের ভেড়া

ভেড়ার মাংসের জিংক এবং আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে যা বাচ্চাদের দৈহিক বৃদ্ধি, টিস্যু পুনর্গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ভেড়ার মাংসের কারনিটাইন নামক অ্যামাইনো এসিড থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভেড়ার মাংসের সাথে গরু এবং ছাগলের মাংসের পুষ্টি উপাদনের তুলনামূলক পার্থক্য নিম্নরূপঃ

পুষ্টি উপাদন ভেড়া গরু ছাগল

পানি (%)

৭৫ ৭৪ ৭৪

আমিষ (%)

২৩ ২২

২২

চর্বি (%)

শক্তি (কিলোজুল/১০০গ্রাম) ৫৪৬ ৪৯৮

৫১৪

জিংক (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম)

৪.৫ ৪.৫ ৪.২
কপার (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) ০.২২ ০.১২ ০.০৮
ফসফরাস (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) ২৯০ ২১৫

২৬০

ভিটামিন-সি (মাইক্রোগ্রাম/১০০গ্রাম)

১০০০ ১৫০০

ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) ১০ ১০

১০

সোডিয়াম (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম)

৮০ ৪০ ৭৭
পটাশিয়াম (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) ৪০০ ৪০০

৩০০

কোলেস্টেরল (মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) ৭০ ৭৬ ৭০

 

কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভেড়ার মাংসের এত উৎকৃষ্টতার স্বত্তেও, আমাদের দেশে ভেড়ার মাংসের জনপ্রিয়তা তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায়না।  ভেড়ার মাংসকে জনপ্রিয় করার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহন করা যেতে পারেঃ

১. মাঠে-ঘাটে ছাড়া অবস্থায় ভেড়া অনেক সময় কাদাপানি ও ধুলা-বালিতে থাকে যার কারণে এদের অপরিষ্কার দেখায়। কাজেই বাজারে আনার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে আনতে হবে যাতে ক্রেতারা এদের পছন্দ করে।

২. ভেড়ার মাংসের গুণগতমান ও পুষ্টি সম্বন্ধে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট ইত্যাদি বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।

৩. সেই সাথে সংশ্লিষ্ট খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ মালচিং ও জৈব প্রযুক্তি অনুসরণে খুবিতে বেগুনি ক্যাপসিকাম চাষে সাফল্য

শেয়ার করুন

প্রকাশ : এপ্রিল ২৯, ২০২১ ৪:০২ অপরাহ্ন
টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনাঃ পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয়তা
মতামত-ফিচার

টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনাঃ পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকাঃ

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশ্ব কৃষিক্ষেত্র বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ বিপ্লব ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, খাদ্য সামগ্রি সরবরাহ নিয়েএকটি গুরত্বপূর্ণ উদ্বেগ তৈরি করেছে। আধুনিক কৃষিরাসায়নিক কীটনাশক, অজৈব সার এবং বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের উপরনির্ভরশীল। এটি কৃষিজাত উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়েছে কিন্তু ঘটিয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস, পরিবেশের অবনতি। টেকসই কৃষির ধারণার উদ্ভব হয় তখন যখন এটি উপলব্ধি হয়েছিল যে আধুনিক কৃষিকাজ দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই জীবন ধারণের বিকাশে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা অর্জনের জন্য কৃষকদের আরও স্থায়ীপদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া জরুরি কারণ টেকসই কৃষি পরিবেশের মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে। এটি খাদ্য উৎপাদনসহ উদ্ভিদ এবংপ্রাণী সামগ্রীর উৎপাদন, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং প্রাণীদের কল্যাণ রক্ষার কাজকরে। টেকসই কৃষির মূল চাবিকাঠি বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য সরবরাহ এবংসংরক্ষণের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া।

 

টেকসই কৃষির উদ্ভাবনঃ

আধুনিক কৃষিতে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ-ফলনশীল হাইব্রিড ফসলের জাতগুলি ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলস্বরূপ দেশীয় জাতগুলি হ্রাস পেয়েছে যেগুলো কেবল পুষ্টিকরই নয়, খরা, রোগ এবং পোকার প্রতিরোধের মতো বিভিন্ন উপকারী বৈশিষ্ট্যও বহন করে। অজৈব সারের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে মাটি ক্ষয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সারগুলি মাটির কাঠামো ধ্বংসকরে এবং মাটি ক্ষয়কারী শক্তির (যেমন, জল, বাতাস) ইত্যাদিকে সংবেদনশীল করে তোলে। ইউরিয়ার মতো নাইট্রোজেন সম্বলিতসারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির অনুর্বরতা দেখা দেয়। ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ  সম্পদের অপব্যবহারের জন্য জলাবদ্ধতা, মাটির ক্ষারত্ব এবং লবণাক্ততার সমস্যা দেখা দেয়। বনজসম্পদ ধ্বংসের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যা, জৈবিক বৈচির্ত্য হ্রাস, খরা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যাগুলিই বিশ্বব্যাপী টেকসই কৃষিরপ্রচলন এবং সম্পৃক্ততা বোধের জন্ম দেয়।

 

টেকসই কৃষির পদ্ধতিঃ

১. শস্য আবর্তনঃ এটি একই জমিতে বছরের পর বছর ধরে একই ফসল রোপণের ফলে আসা পরিণতি এড়ায়। ফসলের পরিবর্তন পোকামাকড়ের প্রজনন চক্রকে ভেঙে দেয়। ফসল পরিবর্তনের সময় নির্দিষ্ট ফসল গাছের পুষ্টি পুনরায় পূরণ করে এবং সারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে।

২. আচ্ছাদিত ফসলচাষঃ অনেক কৃষক একই জমিতে সারাক্ষণ ফসল রোপণ করতে পছন্দ করে এবং কখনও এটিকে বন্ধ্যা ছেড়ে দেয় না। লবঙ্গ বা জইয়ের মতো ফসল রোপণেরমাধ্যমে কৃষক মাটির ক্ষয় রোধ, আগাছা বৃদ্ধিকে দমন করে এবং মাটির গুণমান বাড়ানোরমাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

৩. মাটি সমৃদ্ধকরণঃ বিভিন্ন উপায়ে মাটির গুণগত মান বজায় রাখা এবং সমৃদ্ধ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ফসল সংগ্রহের পরে জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ রেখে এবং মিশ্র উদ্ভিদ উপাদান বা প্রাণীজ সার ব্যবহার করে।

৪. প্রাকৃতিক কীটশিকারীঃ অনেক পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী হল কৃষি পোকার প্রাকৃতিক শিকারি। এমন একটি খামার পরিচালনা করা যেতে পারে  যেটি প্রাকৃতিক কীটশিকারিদের প্রজনন আশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করা যাবে যা একটি কার্যকর পাশাপাশি পরিশীলিত কৌশল।

৫. সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনাঃ সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে পরিবেশকে দুষণমুক্ত রেখে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগবালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার নিচে রাখাকে বুঝায়, যাতে করে পরিবেশ দূষিত না হয়।

 

টেকসই কৃষির সুবিধাঃ

১. পরিবেশ সংরক্ষণে অবদানঃ টেকসই কৃষি জমিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন পানিএবং বায়ু পুনরূদ্ধার করতে সাহায্য করে। এই সম্পদ গুলি ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম।

২. জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাঃ টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় বিপজ্জনক কীটনাশক এবং সারগুলি এড়িয়ে কৃষকরা ফল-মূল, শাক-সবজি এবংঅন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয় যা ভোক্তা, শ্রমিক এবং আশে পাশের সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ।

৩. দূষণ রোধকরেঃ টেকসই কৃষিকাজ নিশ্চিত করে যে খামার থেকে তৈরি বর্জ্য যেন বাস্তুতন্ত্রের অভ্যন্তরেই থেকে যায়। এইভাবে, বর্জ্য দূষণ রোধ হতে পারে।

৪. ব্যয় হ্রাসঃ টেকসই কৃষিক্ষেত্রের ব্যবহার জীবাশ্ম জ্বালানীর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে, যা সংরক্ষণ ও পরিবহণে উল্লেখযোগ্য ব্যয় সাশ্রয় করে। এটি কৃষিকাজের সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করে।

৫. জীব-বৈচির্ত্যঃ টেকসই খামারগুলি জীববৈচির্ত্যের ফলে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ এবং প্রাণী উৎপাদন করে।

৬. প্রাণীদের পক্ষে উপকারীঃ টেকসই কৃষিক্ষেত্রের ফলে প্রাণীদের আরও ভালো যত্নের পাশাপাশি মানবিক চিকিৎসা হয়। কৃষক এবং পশুপালকরা পশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় পশুপালন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

৭. কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে উপকারীঃ কৃষকরা টেকসই কৃষিতে নিযুক্ত থাকাকালীন তাদের পণ্য গুলির জন্য ন্যায্য মজুরিপান। এটি সরকারী ভর্তুকির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে। জৈব ফার্মগুলিতে কারখানার খামারগুলির তুলনায় সাধারণত ২.৫ গুণ কম শ্রমের প্রয়োজন হয় তবে ১০ গুণ বেশি লাভ হয়।

৮. সামাজিক সাম্যঃ টেকসই কৃষিক্ষেত্রের চর্চা শ্রমিকদের আরও বেশি বেতন দেওয়ার পাশাপাশি নানান সুযোগ সুবিধাও প্রদানকরে।

৯. পরিবেশের জন্য উপকারীঃ টেকসই কৃষিক্ষেত্র অনবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাসকরে এবং ফলস্বরূপ, পরিবেশকে উপকৃত করে।

উপসংহারঃ বর্তমান সময়ে, কৃষিক্ষেত্র গুলিকে উৎপাদনমুখী লাভ থেকে শুরু করে টেকসই কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রয়োজন। এই দিকটিতে কৃষকদের দ্বারা প্রযুক্তি ব্যবহারের গতি অনেকাংশে সন্তোষজনক তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কৃষিক্ষেত্রের মধ্যবর্তী পথে রয়েছি। নতুন সুযোগগুলি কৃষক, উন্নয়নকর্মী, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের চোখ খুলছে। তারা এখন তাদের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক স্বার্থ এবংআরও গুনগত এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের জন্য এই অনুশীলনের সম্ভাব্যতা এবং গুরুত্বকে প্রধান হিসেবে দেখছেন। উৎপাদনশীলতা, লাভজনকতা এবং কৃষিজমির টেকসই উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনা আরো স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবী।

 

লেখা এবং প্রচ্ছদঃ

 প্লাবন সাহা

প্লাবন সাহা
কৃষি অনুষদ ৪র্থ বর্ষ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : এপ্রিল ২৫, ২০২১ ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞান: ভাইরাসকে জেলে পাঠানো নাকি উলি ম্যামোথের ফিরে আসা
মতামত-ফিচার

বিজ্ঞানের শিক্ষানবীষরা হয়তো ১৯৮০ দশকের “মানব জিনোম প্রকল্প” কে আধুনিক ডিএনএ  বিজ্ঞানের উৎস বলে অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু শুরুটা হয়েছে তারও তিন দশক আগে ১৯৫০ দশকে ডিএনএর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কার ও পরবর্তিতে ১৯৭০ দশকে “ডিএনএ সিকোয়েন্সিং” আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। এই আবিষ্কার গুলিই ডিএনএ বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছিলো। ডিএনএ  বিজ্ঞানের অনেক সম্ভাবনার মধ্যে সম্ভাব্য প্রয়োগগুলির সন্ধান করতে আমরা শুরু করেছি মাত্র।

ডিএনএর মধ্যে যে জীবন সৃষ্টির সমস্ত রহস্য লুকায়িত তা সবার সন্মুখে নিয়ে আসে, “জিনোমিক্স”( জীবের মোট জেনেটিক সিকোয়েন্স তথ্য /জীবন রহস্য উন্মোচনকরা)-এর অধ্যয়ন। “জিনোমিক্স” গবেষনার বর্তমান রুপের শুরুটা হয়েছিলো ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে। ১৯৮৭ সালে “জিনোমিক্স” নামক পিয়ার-রিভিউ বিজ্ঞান সাময়িকী শুরুর মাধ্যমে “জিনোমিক্স”  শব্দটি  প্রবর্তিত হয়। সেই সময়ে, কম্পিউটিং প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করে যা বিজ্ঞানীদের একসাথে একবারে একটি জিনের পরিবর্তে পুরো জিনোমটি অধ্যয়ন করার সুযোগ করে দেয় । মানুষ প্রথমবারের মতো, তাদের জীবনের বিল্ডিং ব্লক ৩০,০০০ জিন  খোঁজার সক্ষমতা অর্জন করে।

এরপর হতে বিগত কয়েক দশকে ডিএনএ বিজ্ঞান কৃষি, ফরেনসিক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে চলমান কোভিড মহামারীর করোনা ভাইরাস সনাক্তকরন, করোনা ভাইরাসের উৎস নির্ধারন, ভাইরাসের  জীবন রহস্য উন্মোচন ও ভাইরাসের পরিবর্তন খুঁজে বের করা এর বাহিরে নয়। অগ্রসরমান ডিএনএ বিজ্ঞানের কালানুক্রমে অনেক প্রযুক্তি মানুষের হাতে পৌছায়। যার মধ্যে ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং, জিন ম্যাপিং, ট্রান্সজেনেসিস ও জিন নকআউট উল্লেখযোগ্য।

ফরেনসিক বিজ্ঞানে ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং -এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। একজন মানুষের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্ট ঐ মানুষটির জন্য নির্দিষ্ট হয়, যা মানুষটিকে অন্যসব মানুষ থেকে আলাদা করে থাকে। ডিএনএ ভিত্তিক এ প্রযুক্তি পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় খুন ধর্ষনসহ বড় অপরাধ বা বিপর্যয়ের শিকার অনেক মানুষকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিয়েছে।

জিন ম্যাপিং ও ট্রান্সজেনেসিসের মতো কিছু ডিএনএ ভিত্তিক প্রযুক্তি শস্য ও প্রানী প্রজনন কর্মসূচির দক্ষতা বৃদ্ধি, জার্মপ্লাজম সংরক্ষন, কৃষিজাত পণ্যের ফলনও মান উন্নতকরণএবং পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে ডিএনএ বিজ্ঞানের ভূমিকাকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সম্ভাবনা দেখিয়েছে । জিন ম্যাপিং এর মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত জিনগুলি খুজে বের করা যায়। এরই ভিত্তিতে প্রজনন কর্মসূচি সমন্বয় করে অধিকতর উৎপাদনক্ষম শস্য ও প্রানী সৃষ্টি করা সম্ভব। ট্রান্সজেনেসিস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনভেদে রোগ, পোকামাকড়, খরা ও লবনাক্ততা প্রতিরোধী শস্য প্রজাতি সৃষ্টি করে ফলন ও খাদ্যের গুনগত মান বাড়ানো যায়।

ট্রান্সজেনিক ইদুর (ট্রান্সজেনেসিস প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ইদুর) মানুষের রোগ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আলঝাইমার এবং ক্যান্সারের মতো রোগের জন্য ট্রান্সজেনিক প্রানী মডেল রয়েছে। ট্রান্সজেনিক প্রাণী থেকে পুষ্টির পরিপূরক পণ্যও তৈরি করা যায়। প্রথম ট্রান্সজেনিক গাভী রোজি মানব প্রোটিন (প্রতি লিটারে ২.৪ গ্রাম) যুক্ত দুধ উৎপাদন করে। এই দুধে মানব জিন আলফা-ল্যাক্টালবুমিন রয়েছে যেটিকে প্রাকৃতিক গরুর দুধের বিকল্প হিসাবে হয়।

 

উল্লেখিত ব্যবহার সমূহের পাশাপাশি ডিএনএ প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। পিসিআর ও আরটি-পিসিআর এর মতো প্রযুক্তি পৃথিবীর হাজারো রোগ নির্নয়ে নির্ভেদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। রিকম্ভিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি বিভিন্ন রোগের টিকা, এন্টিবডি, ইনসুলিন ও এন্টিবায়োটিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে মানব জিনোম  প্রকাশের পর জিনোম নির্দেশিত পারসোনাল মেডিসিনের ব্যবহারও শুরু হয়েছে।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিএনএ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম “CRISPR”(ক্রিসপার)। ক্রিসপার একটি নতুন প্রযুক্তি যা ২০১২ সালে আমাদের সামনে আসে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি জিনকে সম্পাদনা করে নতুন জিন তৈরি করা যায়।  যদি কোন ব্যক্তি ত্রুটিযুক্ত জিন বহন করেন ক্রিসপারের মাধ্যমে তা সনাক্ত ও সম্পাদনা করে ত্রুটিমুক্ত করা যায়। ক্রিসপারের বড় সম্ভাবনার দিক হলো নিরাময়হীন জেনেটিক রোগের চিকিৎসা, মানে জিন থেরাপি। ক্রিসপার ব্যবহার করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো রোগের সংবেদনশীল জিনগুলি সংশোধন করে ঐসব রোগের ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে। এক্ষেত্রে একটি বিতরণ ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর শরীরে ক্রিসপার প্রয়োগ করা হয়। এই বিতরণ ডিভাইস কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গে গিয়ে জিনগুলি পরিবর্তন করে। এখন থেকে পাঁচ বা দশ বছর পরে ক্রিসপার ব্যবহার করে জিন থেরাপির এমন রুপও হয়তো আসবে এসব রোগগুলির সংবেদনশীল জিনগুলি সত্যিকার অর্থে আর থাকবেই না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্রিসপারের তৃতীয় প্রয়োগটি হলো ভ্রূণ স্তরে একটি ত্রুটিযুক্ত জিনকে সংশোধন করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও দম্পতির ত্রুটিযুক্ত জিন থাকে তা একটি ভ্রূণকে ভয়ংকর রোগের দিকে ধাবিত করে, এক্ষেত্রে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন করে জিনগুলি ভ্রূণ স্তরই সংশোধন করা সম্ভব। ক্রিসপারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জিনগত রোগ ও এইচআইভি বা ইবোলা ভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগও সনাক্ত করা যায়।

 

ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞান প্রত্নতত্ত্ব, চারুকলা এবং কম্পিউটিংয়ের মতো সুদূর প্রসারী শাখায়ও প্রসারিত হওয়ার প্রক্রিয়ার রয়েছে। যার কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি-

 

ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ উন্মোচন করাও সম্ভব। ধরা যাক কোনো অপরাধী ছদ্মবেশ ধারন করে একটি অপরাধ করলো। ক্রাইম সিন থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলি থেকে ডিএনএ ব্যবহার করে ফেসিয়াল কম্পোজিট তৈরি করা সম্ভব। যেহেতু জিনগুলি চুলের রঙ, চোখের রঙ এবং মুখের কাঠামোর উপর প্রকট প্রভাব ফেলে তাই কোনও ব্যক্তির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ঐ ব্যক্তি দেখতে কেমন তার মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব। এই ধরনের ফেসিয়াল কম্পোজিট প্রতিকৃতি-মানের চিত্র তৈরি করতে না পারলেও এটি প্রত্যক্ষদর্শীর পক্ষপাত এবং ত্রুটিযুক্ত স্মৃতির সমস্যামুক্ত হয়ে অপরাধিকে সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। এই ফেসিয়াল প্রোফাইলিং প্রযুক্তিটি প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও সহায়তা করতে পারে। ডিএনএ  ভিত্তিক ফেসিয়াল প্রোফাইলিং ব্যবহার করে  বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে কিছু নিয়ান্ডারথাল সম্ভবত লালচে চুল এবং ফর্সা ত্বকের অধিকারী ছিলো।

 

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডিএনএ প্রযুক্তির অধিকতর পরিশীলিত ব্যবহারে উলি ম্যামথ, ডোডোস এবং অন্যান্য বিলুপ্ত প্রজাতিগুলিকে ফিরেয়ে আনা যাবে। বিলুপ্ত প্রজাতির ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করেএবং ঐ প্রজাতির কাছাকাছি কোনো প্রজাতির ডিমে ডিএনএ অনুলিপিগুলি ইনজেকশনের মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রজাতির ভ্রূণের তৈরি সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, একটি উলি ম্যামথের ভ্রূণের জন্য একটি হাতির ডিম এবং গর্ভাশয় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন হবে, কারণ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তাই তাদের ডিএনএ ক্ষয় হয়ে পড়েছে।

 

প্রত্নতত্ত্বের পাশাপাশি সমসাময়িক শিল্পের ও বিষয় হয়ে উঠছে ডিএনএ বিজ্ঞান।  যেমন ডিএনএর রাসায়নিক “অক্ষর” (এ, সি, জি এবং টি) এর দীর্ঘ স্ট্রিং ব্যবহার করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখা যায় যা এই স্ট্রিংগুলিকে আক্ষরিক গানে অনুবাদ করতে পারে। ফ্লোরোসেন্ট ব্যাকটিরিয়া জিনগতভাবে পরিবর্তিত করে মনের মতো সৈকত দৃশ্যও তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তিতে আলোর সংস্পর্শে আসার সময় ব্যাকটিরিয়া বিভিন্ন রং ধারণ করে নয়নাভিরাম সৈকতের দৃশ্য দিয়ে থাকে।

 

ডিএনএ প্রযুক্তি শিল্পকর্মের জালিয়াতির রোধ করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। পিকাসু-র চিত্রকর্ম ও অবিকল নকল করে এমন জালিয়াতি হয় যেখানে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা আসল নকল পার্থক্য করতে ব্যর্থ হন। এধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা চিত্রকর্মের সাথে অন্য একটি প্রাণীর ডিএনএ ভর্তি ছোট একটি সিন্থেটিক লেভেল ব্যবহার করতে বলেন। পরবর্তীতে সিন্থেটিক  বিটগুলিকে ব্যবহার করে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে ডাটাবেসের সাথে যাচাইপূর্বক আসল শিল্পকর্মটি খুজে বের করা সম্ভব।

 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধু আমেরিকাতেই মুদি দোকানগুলি বিক্রি করা মাছের প্রায় এক-পঞ্চমাংশকে ভুলভাবে চিহ্নিত করেছিল। সুশির রেস্তোরাঁগুলি ছিল আরও খারাপ। তারা তিন-চতুর্থাংশ মেনুতে দেওয়া মাছের পরিবর্তে অন্য কোন মাছ পরিবেশন করেছিলো। ডিএনএ বার কোডিং এই ধরণের প্রতারণা উদঘাটনে সহায়তা করতে পারে। একটি মাছ থেকে কিছুটা পেশী বের করে এবং তার ভিতরের ডিএনএ সিকোয়েন্স করে বিজ্ঞানীরা দ্রুত একটি প্রজাতিটিকে অন্যটি থে কেআলাদা করতে পারেন। যদি প্রযুক্তিটি বিকশিত হতে থাকে তবে ভোক্তারা একদিন বার কোডারকে টেবিলে আনতে পারবে, তারা নিজেরাই তাদের স্মার্টফোনে দেখতে পাবে যেটা তারা অর্ডার করেছিল সত্যিই তারা সেটি পাচ্ছে কিনা।

 

“ডিএনএ অরিগামী” হলো ডিএনএ প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের একটি। এ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ-কে ন্যানুস্কেলে ভাঁজ করে দ্বি- অথবা ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি করা হয়। অদ্যাবধি বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মাইক্রোস্কোপিক তারা, স্মাইলি ফেস এবং অন্যান্য চিত্র তৈরি করতে এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করেছেন। তবে ডিএনএ অরিগামি ভবিষ্যতে ঔষধ বিতরণ ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষভাবে কারুকৃত ডিএনএ-অরিগামির খাঁচাগুলি সরাসরি কোন টিউমারে ড্রাগ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বন্ধ  খাঁচাগুলি কেবল টার্গেটযুক্ত টিউমার কোষগুলির সাথে আবদ্ধ হওয়ার পরে  খুলবে। একইভাবে, খাঁচাগুলি ভাইরাসের জন্য জেল হিসাবে কাজ করতে পারে। অদুর ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর মতো নিরাময়হীন ভাইরাসের প্রতিরোধক কারাগার হিসেবে ডিএনএ-অরিগামির খাঁচাগুলি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

তথ্য সংরক্ষণের প্রাচীনতম মাধ্যম হল ডিএনএ। ডিএনএ অণু বিপুল পরিমাণে তথ্য সঞ্চয় করতে সক্ষম এবং যা কয়েক হাজার বছর ধরেও নষ্ট হয় না। সুতরাং ডাবল হেলিক্সযে কম্পিউটিংয়ে ব্যবহার করা সম্ভব এটি সহজে বোঝা যায়। বিজ্ঞানীরা কোনো অক্ষর বা নম্বরকে ডিএনএ-র এ, সি, জি,টি-র স্ট্রিং-এ (যেমন অনেক আধুনিক কম্পিউটার ১ এবং ০ এর হিসাবে তথ্য কোড করে) তথ্য কোড করেসিন্থেটিক ডেটা ডিএনএ তৈরি করতে পারেন। ডিএনএ-সিকোয়েন্সিং মেশিনপরে সেই ডেটা বের করতে পারে। এক (১) গ্রাম ডিএনএ-তে ৭০০ টেট্রাবাইট ডাটা সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা ১ মিলিয়ন সিডি-র ডাটা সমতূল্য। যদিও তাত্ত্বিকভাবে এটি অনেক বেশি ডাটা ধারণ করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত ডিস্ক ড্রাইভে থাকা সংরক্ষিত ডাটা যদি ডিএনএতে এনকোড করা যায় আপনি তা হাতের তালুতে নিয়ে চলতে পারবেন।

পুরানো সিনেমাগুলি ডিএনএ-র মাধ্যমে সংরক্ষণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। টেকনিকালার নামে একটি বিনোদন সংস্থা ১৯০২ সালে নির্মিত “অ্যা ট্রিপ টু দ্য মুন” নামক সিনেমা সংরক্ষণের  মধ্য দিয়ে পুরানো সিনেমাগুলিকে ডিএনএ হিসাবে সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করেছে।

হার্ভার্ডের জিনবিজ্ঞানী জর্জ চার্চ সম্প্রতি তাঁর লেখা একটি বইকে ডিএনএ-তে রূপান্তরিত করেছেন, তারপরে তিনি একটি টেস্টটিউবে ৭০ বিলিয়ন কপি সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছেন। এটিই অদ্যাবধী পাঠ্যবই-এর ইতিহাসে সর্বাধিক পুনঃ উত্পাদিত বই। ডিএনএ গবেষকদের কেউ কেউ এ পরিকল্পনাও করছেন যে উইকিপিডিয়ায় প্রতিটি নিবন্ধকে ডিএনএ বর্ণের সিন্থেটিক স্ট্রিংগুলিতে এনকোড করার জন্য, তারপরে সেই ডিএনএকে প্রাকৃতিক আপেলের জিনোমে স্থাপন করে জ্ঞানের একটি আপেল ফল তৈরি করবেন।

 

কিছু গবেষক বায়োলজিকাল কম্পিউটার তৈরিতে ডিএনএ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই বায়ো-কম্পিউটারগুলি স্ক্রিন এবং কীবোর্ড সহ ল্যাপটপের মতো হয়তো দেখাবে না। বরং, তারা টেস্ট টিউব বা বায়োলজিকাল পর্দা দিয়ে তৈরি হবে। তবে ল্যাপটপের মতো, তাদের কাছে তথ্য নেওয়ার, এটি প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা থাকবে। ডিএনএ কয়েক মিলিয়ন বা এমনকি কয়েক বিলিয়ন কম্পিউটিং প্রক্রিয়া সমান্তরালে করার ক্ষমতা রাখে। বায়ো-কম্পিউটারগুলি  তাই অনেক জটিল কম্পিউটিংয়ে ব্যবহার হতে  পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয়ের কথা, যার মধ্যে তাপমাত্রা, ব্যারোমেট্রিক চাপ এবং আর্দ্রতাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের অনেকগুলি তথ্য একসাথে হিসেবে নিতে হয়। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই  করার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক ডিভাইস (যা সহজে জীবন্ত কোষগুলিতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না)-এর বিপরীতে ডিএনএ ভিত্তিক কম্পিউটারগুলি সম্ভবত অনেক বেশী বাস্তব সময়ে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে কারণ জীবন্ত কোষে ডিএনএ সহজে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

 

সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ও বিজ্ঞানের কালানুক্রমে কতশত প্রযুক্তির প্রতি মানুষ তার আগ্রহ হারিয়েছে। আমরা ফ্লপি ড্রাইভ থেকে গুগল ড্রাইভে এসে গেছি, কিন্তু ডিএনএ নিয়ে কিছুটা আগ্রহ আমাদের সবসময়ই ছিলো, থাকবে, কারণ খালি চোখে অদৃশ্য এই ডিএনএ-তেই যে লুকায়িত আছে জীবন সৃষ্টির সমস্ত রহস্য। এই অদম্য আগ্রহই আমাদেরকে পিসিআর থেকে বায়ো-কম্পিউটার পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। ঐখান থেকে আমরা কোথায় যাবো? এই প্রশ্নের তো ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞানই দিতে পারবে।

 

সবাইকে “ডিএনএ দিবস-২০২১” এর শুভেচ্ছা।

 

লেখকঃ

অধ্যাপক ড. আশুতোষ দাশ

বিভাগীয় প্রধান

জেনেটিক্স ও এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগ

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : এপ্রিল ১, ২০২১ ৫:০৫ অপরাহ্ন
নিরাপদ খাদ্য: চাই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন
মতামত-ফিচার

।।ফারজানা হক।।
নিরাপদ খাদ্য এবং মনোজগৎ শব্দ দুটি গভীর সম্পর্কযুক্ত, মনোজগতের পরিবর্তন, সৃষ্টিশীলতা, চাহিদা এবং অনুধাবন ছাড়া নিরাপদ খাদ্যের মত এত বৃহৎ একটি বিষয় কোনো ভাবেই কোনো দেশ এবং জাতির জন্য নিচিত করা সম্ভব নয়। পোলট্রি সাব-সেক্টর কৃষির উন্নয়ন ও জনগণের জন্য মাংস এবং ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণের অপুষ্টি কমাতে এবং কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এটি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং প্রায় কয়েক মিলিয়ন লোকের জন্য প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই উপ-খাতটি বাংলাদেশের জনগণের মূল প্রোটিন চাহিদার একটি বড় অংশ, তাছাড়াও অর্থনৈতিক দিক থেকে এর গুরুত্ত্ব প্রাণিসম্পদ খাতে অপিরিসীমম, প্রাণিসম্পদ খাতের ১৪% অবদান রাখে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে মুরগির মাংসই বাংলাদেশের মোট মাংস উৎপাদনের ৩৭% অবদান রাখে। দেশে মোট প্রাণী প্রোটিন সরবরাহের প্রায় ২২-২৭% পোলট্রি অবদান রাখে।

বলা হয়ছে যে এশিয়াতে, পোলট্রি এর সার মাছের জন্য খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যেখানে একটি সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হিসাবে জলাশয়ের উপরে পোলট্রি স্থাপিত হয়, উদাহরণস্বরূপ, মাছ এবং হাঁস চাষ। পোলট্রি উন্নয়ন বাংলাদেশে পোলট্রি ও হাঁস-মুরগির পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

নিরাপদ খাদ্য বলতে আমরা বুঝি সেই খাবার যাতে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় দূষিত বস্তূর পরিমাণ থাকে যা খাদ্য বৃদ্ধি, প্রস্তুতি, প্রসেসিং, সংরক্ষণ, বিক্রয় বা পরিবেশনের যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে। খাবারগুলি সাধারণত ফসল, পশুসম্পদ এবং মৎস সম্পদ থেকে এ পারে। নিরাপদ খাদ্য হল মানব ও প্রাণীর সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত। অনিরাপদ খাদ্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং প্রাণীতে অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং বহু মৃত্যুর কারণ হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিগত দশকে প্রতিটি মহাদেশে খাদ্যজনিত রোগের মারাত্মক প্রকোপগুলি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং অনেক দেশে সম্পর্কিত অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, খাদ্য সুরক্ষা দেশীয়, আ লিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়াও বলা যায় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখনো খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়েও অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং ব্যবহার করে দেশের অনেক ক্ষতি সাধন করছে।

নিরাপদ খাদ্য সাধারণ মানুষের, একটি স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল চালিকা শক্তি। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি মানেই সে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নয়, আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষৎ প্রজন্মের নিরাপদ খাদ্য, সু-শিক্ষা ও জরুরী। সুতরাং যদি বলি আমার দেশের মাথা পিছু জনগণের যায় ২০০০ ডলার কিন্তু ১৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু ক্যান্সার, এন্টিবায়োটিক রেসিসটেন্স এবং নবজাতকের মৃত্যু অন্নান্য সব দেশের চেয়ে বেশি তাহলে এই উন্নয়ন অবনতির চেয়েও খারাপ।

বাংলাদেশ শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদল্যের একটি গবেষণায় বলা হয় ২০১০ এ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮০ যা ২০১১ তে গিয়ে দাঁড়ায় ৪০০ তে এবং ৪৫৫ ২০১২ তে। শিশুদের ক্যান্সার এর অনেক কারণের মাঝে একটি বড় কারণ অনিরাপদ খাদ্য , অনিরাপদ খাদ্য শুধু শিশু না তরুণ এবং যুব সমাজেকেও তরুণ বয়েসে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগাচ্ছে। সতরাং এখন ই সময় সবার মনভাব পরিবর্তন করার এবং জাতিকে এবং নিজেকে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে শুধু সচেতন না, স্ব স্ব জায়গায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে অনেকদিন আগে থেকেই ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশান (এফ এ ও ) ইন্টারন্যাশনাল বেসরকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সেফ ফুড এগ্রিকালচার নিয়ে। । বর্তমানে বাংলাদেশ এই শিশু অপুষ্টি দূর করতে প্রায় সক্ষম। যেখানে মুরগির মাংশ এবং ডিম এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে বাংলদেশে “ফুড সেফটি গভর্নেন্স ইন পোলট্রি সেক্টর” শিরোনামে একটি প্রকল্প চজঙকঅঝ প্রোগ্রাম এর সহযোগিতায় বিবিএফ, কেব এবং বিকাস নামে ৩টি সংস্থা বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি এর সঙ্গে যৌথভাবে স্বল্প পরিসরে পাইলট আকারে কাজ করছে।

কিন্তু বাংলাদেশের এত বড় শিল্প এর সংরক্ষণে জাতীয় ভাবে কোনো প্রকল্প, ব্যবস্থাপনা , ট্রেইনিং প্রকল্প অথবা বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম নেই যার সাহায্যে প্রান্তিক খামারি থেকে শুরু করে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সবাই নিরাপদ পোলট্রি পণ্য উৎপাদনে সকল সুবিধা সহ শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। খাদ্য বিশ্লেষণ, ভোক্তা সচেতনতা, খাদ্য জনিত অসুস্থতা নজরদারি, খাদ্য পরিদর্শন এবং প্রয়োগকরণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ফুড সেফটি নিয়ে কোনো ফলাফল দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিএফএসএ এর কাছে ফুড সেফটি অথোরিটি হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রজেক্ট অফিসার, বীজবিস্তার ফাউন্ডেশন
MPH, MS in Microbiology, DVM
[email protected]

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ৪, ২০২১ ৮:৫৬ অপরাহ্ন
দেশীয় প্রাণিসম্পদ অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা
মতামত-ফিচার

একসময় দেশীয় গৃহপালিত পশুপাখি ছিল কৃষক পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ । দেশীয় প্রজাতির এইসব গবাদিপশু গৃহস্থ ঘরের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি অর্থের যোগান দিত পরিবারে । দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারনে প্রাণীজাত খাদ্যের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ও কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য অধিক লাভের আশায় দেশীয় প্রাণিসম্পদের জায়গায় আজ অধিক উৎপাদনশীল বিদেশি জাতগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যার ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশীয় প্রাণিসম্পদের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন।

ভিনদেশীয় জাত ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু এসব বিদেশি/ক্রস প্রজাতির আমাদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতার অভাব, ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা ও অধিক রোগপ্রবণতার কারণে এদের পালনে কৃষককে আর্থিকভাবে হিমশিম খেতে হয়।পক্ষান্তরে আমাদের দেশীয় জাতগুলোর উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হলেও তারা উপরোক্ত সমস্যামুক্ত।

দেশীয় পশুপাখি আবহমানকাল ধরে আমাদের দেশে টিকে আছে, সেই সঙ্গে আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় খাবার খরচও কম। উচ্চ রোগ প্রতিরোধী বলে পশুপাখির চিকিৎসা ব্যয় খুব কম। দেশি গরুর দুধ, হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস, ছাগলের মাংস ক্রেতার কাছে অধিক পছন্দনীয় বলে উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য দ্বিগুণ বা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি। আমরা যদি অন্ধের মতো বিদেশি জাতের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি তবে

আমাদের নিজস্ব ভাল গুণাগুণসম্পন্ন দেশীয় জাত হারিয়ে ফেলব। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে প্রচলিত জাত থেকে ভিন্নতর কিছু উৎপাদনের সম্ভাবনা কমে যাবে ।

বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন জাত যেমন হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান গরু, ব্রাহামা গরু, মেরিনো ভেড়া, ব্রয়লার ও লেয়ার স্ট্রেইন প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের নানান জাতের মিশ্রণে দীর্ঘ পরিকল্পিত গবেষণার মাধ্যমে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে । আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জাত যেমন- গরু: চট্টগ্রামের লাল গরু আকারে ছোট হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই জাতের গরু সর্ব্বোচ্চ ৮.৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।কষ্টসহিষ্ণু এই জাতের গরুর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও প্রাণীগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। এছাড়াও উত্তরবংঙ্গের ধূসর গরু, পাবনা গরু, মীর কাদিম গরু আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়া পৃথিবীব্যাপী ‘কুষ্টিয়া গ্রেড’ নামে পরিচিত এবং ১ কেজি মাংসের দাম প্রায় এক হাজার টাকা। পৃথিবীখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল আমাদের দেশের সর্বত্র পাওয়া যেত কিন্তু প্রজননক্ষম পাঠার অভাব ও পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের পাঠা এনে দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে প্রজনন অবাধে চলছে বিধায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে ।

বাংদেশে মুরগির অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দুটি জাত হলো আছিল ও পাহাড়ি মুরগি । এছাড়াও দেশি খাটো মুরগিও যথেষ্ট সম্ভবনাময়। ক্ষিপ্র গতি ও শিকার করার দক্ষতার জন্য বিখ্যাত সরাইল জাতের কুকুরের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও দেশি হাঁস, গাড়ল ভেড়া, দেশি শূকর, দেশীয় বিভিন্ন জাতের কবুতর হতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয়।

দেশীয় জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় নিজস্ব নির্দিষ্ট জাতের মধ্যে পরিকল্পিত প্রজনন ঘটাতে হবে। বিভিন্ন উৎসব যেমন কোরবানি ঈদ, পুজোতে প্রজননক্ষম দেশীয় ভাল ষাঁড়/পাঠা/ মোরগগুলোকে গণহারে জবাই/উৎসর্গ না করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহ করতে হবে।

দেশীয় জাত উৎপাদন ও সংরক্ষণে সম্পক্ত কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় জাতের গবেষণা জোরদারকরণ আবশ্যক।

প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের চ্যালেন্জ মোকাবেলায় দেশীয় জাতের সঠিক সংরক্ষণের জন্য নীতিনির্ধারণী মহলের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক ব্যবস্থপনা প্রয়োজন ।

নদী যেমন উৎসের দিকের ফিরে যায় না কিন্তু উৎসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলে নদীর অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি আমরাও অধিক উৎপাদনশীল বিদেশি জাত ব্যবহার করব কিন্তু দেশীয় জাতকে উপেক্ষা করে নয়। সূত্র:আমাদের সময়.কম
লেখক: সহকারী গবেষক , পশুপ্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগ, বাকৃবি

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop