আজ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার এর উদ্যোগে ” আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস -২০১৮ ” পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সিলেটের বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেমিনার ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আইইউসিএন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় প্রাধিকার সেক্রেটারি কিরাত আল মামুনের পরিচালনায় সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আবু ইরবাত আহমেদ রাফি মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাধিকারের তাজুল ইসলাম ।তিনি শকুনের প্রয়োজনীয়তা এবং রক্ষার উপায় তুলে ধরেন। উপস্থিত ছিলেন প্রাধিকারের সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল মজিদ উজ্জল।
তার বক্তব্যে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুনের প্রয়োজনীয়তা পরিবারের বাকি সদদ্যদের সাথে আলোচনা করে সবাইকে সচেতন করে তোলার জন্য অনুরোধ করেন । আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রাধিকারের সভাপতি বিনায়ক শর্মা বলেন-
“বিশ্বের উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন , অবাধে বন উজাড় , বৃক্ষ নিধন , পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব থেকে এ প্রানী বিলুপ্ত হচ্ছে । এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ প্রাণী প্রকৃতি থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।”
বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এক সময় দেশে ৭ প্রজাতির শকুন থাকলেও রাজ ও সরুছুঁটি প্রজাতির শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলা শকুনও বিলুপ্তির পথে। উপমহাদেশে পাখি পরিবারের মধ্যে শকুনই একমাত্র প্রজাতি যা পৃথিবী থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আপনিও নিশ্চয়ই শৈশবে-কৈশোরে শকুনের ওড়াউড়ি দেখেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর আগের মতো এই প্রজাতির পাখিটি দেখা যায় না। বলতে গেলে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।
এক সময় এই অঞ্চলে পাঁচটির বেশি প্রজাতির শকুন দেখা যেত। এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি প্রজাতি_ হোয়াইট ব্যাকড, লঙ-বিলড, স্লেন্ডার বিলড।অথচ সত্তর দশকে রাজ শকুন আর বাংলা শকুনে ছেয়ে ছিল ঢাকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রগুলোতে দেখা যায় দল বেধে মৃতদেহের উপর বসে আছে তারা। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বুদ্ধ নারিকেল গাছের সারিতে আর পলাশী ব্যারাকের কাছের উঁচু গাছগুলোতে দেখা যেত বাংলা শকুনের। এখন বাংলা শকুন ছাড়া আর কোন শকুন কারো চোখে পড়ে না।এর বৈজ্ঞানিক নাম জেপস বেঙ্গালেনসিস (Gyps bengalensis)। এদেশে বেশী দেখা যেত বলেই তাদের নামের শেষে বাংলা শব্দটি চলে এসেছে। এখন গোটা পৃথিবীতেই এর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সংখ্যায় দশ হাজারের বেশী হবেনা। বাংলাদেশে বাংলা শকুন এখন বিরল প্রজাতি। সব মিলে এদেশেও এদের সংখ্যা ৩০০ এর বেশী হবে না। তাও আবার বেশীরভাগই দেখা যায় সুন্দরবন এলাকায়। এছাড়া বেশ বড় কয়েকটি দল এখন রয়েছে শ্রীমঙ্গলের কালাছড়া ও হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা এলাকায়।
বক্তারা জানান প্রয়োগকৃ্ত অসুস্থ প্রানী মারা যাবার পর দেহে এর কাযকারিতা জীবিত থাকে এবং ঐ মৃত পশুর মাংশ খেলে পাশ্ব প্রতিক্রিয়ায় কিডনিতে পানি জমে এবং অল্পদিনেই মারা যায় । এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রাণীকুল থেকে শকুন নামক পাখি প্রজাতির অবস্থান অতীত ইতিহাস হিসাবে জাদু ঘরে শোভা পাবে বলে জানান। সরকার এ ওষুধটি এখনই নিষিদ্ধ না করলে শকুন রক্ষার জন্য বড্ড দেরি হয়ে যাবে।পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে , মেলোক্সিক্যাম পশুকে একই ধরনের রোগের আরোগ্য দেয়।এতে শকুনের ও কোন ক্ষতি হয় না। এ ওষুধের প্যাটেন্ট ও হয়নি ফলে যেকোন কোম্পানি তৈরী করতে অসুবিধা নেই।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাধিকারের জয়েন্ট সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, কোষাধক্য মহিউদ্দিন রিফাত,সাংঘটনিক সম্পাদক(ফিসারিজ) খন্দকার আবু সাঈদ, সহকারি কোষাধক্য আরিফ রাফসান,এক্সিকিউটিভ মেম্বার মোঃ জাহিদ হোসাইন,আকিব, আসিফ, রিফাত,শোভন সহ অন্যান্যরা।