বাংলাদেশে সবত্রই কম-বেশী লিচুর চাষ হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন তা আমাদের চাহিদার মাত্র এক চতুর্থাংশ পূরণ করে। লিচু টাটকা ফল হিসেবে বাংলাদেশের সর্বত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। লিচুতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি, সি, খনিজ লবন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যামান। আমাদের দেশে লিচুর অনেক রোগ বালাই দেখা যায়। লিচুর এ রোগসমূহ দমন করতে পারলে লিচুর উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি কর সম্ভব। লিচুর মারাত্মক একটি রোগের কারণ ও এর প্রতিকার ব্যবস্থা আলোচনা করা হলঃ
ডাউনি মিলডিউ (Downy mildew) রোগ
রোগের কারণঃ পেরোনোফাইথোরা লিচি (Peronophythora litchii) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ
সকালের কুয়াশা বা মেঘলা আবহাওয়ায় জীবাণু দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। দিনে উচ্চ তাপমাত্রা ও রাত্রে নি¤œ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্র আবহাওয়া রোগের বিস্তার ও আক্রমণের জন্য অনুকুল অবস্থার সৃষ্টি করে।
রোগের লক্ষণঃ
- রোগের জীবাণুু মুুকুলে, কচি ফলে এবং নতুন ডগায় সাদা পাউডারের আবরণ সৃষ্টি করে।
- দৃশ্যমান সাদা পাউডার প্রকৃৃতপক্ষে ছত্রাকজালিকা এবং বীজঅণুর সমষ্টি।
- জীবাণু মুকুল থেকে অতিরিক্ত খাদ্যরস শোষণ করার ফলে আক্রান্ত মুুুকুল শুকিয়ে যায়।
- ফলের উপর পানি ভেজা দাগ দেখা যায়।
রোগের প্রতিকারঃ
- গাছের নীচে পড়ে থাকা মরাপাতাসহ যাবতীয় পরিত্যক্ত অংশ কিছুদিন পর পর সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- যদি প্রতিবার তীব্র বেগে পানি স্প্রে করে ডাল ঝাকানো যায়, তবে রোগ ৫০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
- সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (যেমন-বেকিং সোডা) প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
- মুুকুলে সাদা পাউডারের আবরণ দেখা দিলেই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি বা কুমুলাস ডিএফ) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব) মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই শিবগঞ্জ, বগুড়া। মোবাইলঃ ০১৯১১-৭৬২৯৭৮ ইমেইলঃ zaman.path@gmail.com