নূর-ই-কুতুবুল আলম, খুবি থেকে: ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার। সকাল ৯টার মাঝেই বন্ধু ইমরান আর আমি নাস্তা শেষ করে নিই। ইমরানের ব্যস্ততার কারণে আমি নিজেই রিক্সাযোগে ফিশারিজ ফ্যাকাল্টিতে চলে আসি। যথাসময়ে একুয়াকালচার ট্রেনিং শুরু করা হয়। প্রফেসর ডঃ এম. এ. সালাম স্যার মোটামুটি প্রেজেন্টেশন দিলেন, এরপর আমাদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়। এরপর গ্রুপ ভিত্তিক সবাইকে কালার পেপার দেয়া হয় এবং কিছু কালার মার্কার, রুলার এবং পেনসিল দেয়া হয়। প্রতি গ্রুপের ভাগে পড়ে একুয়াকালচার করার একেকটি মেথড অংকন করে দেখানো, এবং সাথে সকলের সামনে প্রদর্শন করে মেথডগুলোর মেকানিজম বুঝিয়ে দেয়া। আমাদের গ্রুপে পড়েছিলো Nutrient Film Technique (NFT) system. কার্যত আমার কোনো কাজই করা লাগেনি। ফিশারিজের এমএস এর দুই আপু ছিলেন আমাদের গ্রুপে, আর দুইজন ভাই (ছাত্র ছিলেন না)। মোটামুটি চারজনে মিলেই ছবি এঁকে ফেললেন। স্যার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, ছবি আঁকা শেষে প্রতি গ্রুপ থেকে দুজন করে এসে প্রেজেন্টেশন দিলেন।
ছবি : মোঃ নাজমুস সাকিব, শেকৃবি প্রতিনিধি।
প্রেজেন্টেশন পর্ব শেষে আমরা সালাম স্যারের সাথে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ এর বিস্তারিত ধারণা পেলাম। স্যার প্রতিটা স্টেপ ধরে ধরে আমাদেরকে বুঝাতে লাগলেন। চলতে লাগলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। কোথায় কোন জিনিস পাওয়া যায় সেটা নিয়েও আলোচনা হলো। লাঞ্চের আগেই হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পর্ব আমরা শেষ করি।
লাঞ্চ শেষে ভেবেছিলাম স্যার বুঝি এবার ট্রেনিং সমাপ্ত করে দিবেন। মনে মনে খুশিই হলাম, যাক তাহলে এবার বাকৃবি ক্যাম্পাসটা ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবো। কিন্তু কে জানতো, স্যার এবারও নতুন চমক দেখিয়ে আমাদের মন কেড়ে নিবেন! স্যার একটু গম্ভীর হয়ে আলোচনা শুরু করেন। টপিক Wheat Grass! দেখে আমার চক্ষুচড়ক গাছ! শুরুতে বিষয়টা একটু বদহজম হতে শুরু করলেও স্যারের আলোচনার গভীরতার সাথে সাথে বুঝতে পারি আসলেই গমের ঘাস কি জিনিস! মানুষের অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় থেকে শুরু করে আলোচনায় আসে পোল্ট্রির ফিড হিসেবে গমের ঘাসের ব্যবহার, লাইভস্টকেও একইভাবে গমের ঘাসের উপযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাই। গমের ঘাসের একেক ফাংশন যতই দেখছিলাম ততই শিউরে উঠছিলাম, আসলেই, এই দুনিয়ায় অনেক কিছুই অনাবিষ্কৃতই যেন রয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন অথচ আমরা খেয়ালও করি না। বিশেষ করে Dry Matter সহ বিভিন্ন Mineral এবং Nutrients এর আধিক্য দেখে অন্যান্য খাবারকে গমের ঘাসের তুলনায় পুষ্টির অভাব (!) বলে মনে হতে থাকলো। স্যার গমের ঘাসের জুস সম্পর্কে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন, নিজে এই জুস পান করে কি কি অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন সেটাও আমাদের কাছে শেয়ার করলেন। স্যার এটাও বলেন, ব্রয়লারকে গমের ঘাস খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে দেবার পর মাংস দেশি মুরগীর ন্যায় কিছুটা শক্ত এবং প্রায় একই স্বাদযুক্ত বলে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন।
ছবি : মোঃ নাজমুস সাকিব, শেকৃবি প্রতিনিধি।
গমের ঘাসের আলোচনা পর্ব শেষে জীবন ভাই শশব্যস্ত হয়ে পড়েন, সার্টিফিকেট আসতে শুরু করেছে। মনের ভেতরে এবার তৃপ্তির ছায়া নেমে এলো, অবশেষে সেই সার্টিফিকেট, যার জন্য সুদূর খুলনা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়া! একে একে ট্রেইনিদের নাম ঘোষণা করা হলো। আমার পর্ব আসতেই স্যারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট হাতে নেয়ামাত্র স্যার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ও খুলনা থেকে এসেছে।” শুনে একটু অবাকই হলাম, অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই। স্যার সবার ব্যাপারেই কমবেশি বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছিলেন। তবে সার্টিফিকেট পাবার পর যেটা অনুভব করেছি, একটা সার্টিফিকেটই জীবনের সব না। অর্জিত ট্রেনিংকে কাজে লাগাতে পারাই হচ্ছে আসল সার্টিফিকেট লাভ করা।
সেদিন সন্ধ্যায় বাকৃবিতে অধ্যয়নরত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রজ ব্যাচের (বাকৃবিতে এমএস করছেন) কয়েকজনের সাথে দেখা করলাম। দেখা হয় রবিন ভাই, সোনিয়া আপু, হাবিব ভাই আর সুব্রতদার সাথে। দেখা করা শেষে ইমরানের হল থেকে ব্যাগ কাঁধে করে খাবার হোটেলে ঢুকলাম। ইমরান আর আমি ডিনার সেরে নিই। ইমরান এরপর এক ছোট ভাইকে ডেকে দেয়, ছোট ভাই অপূর্ব ইজিবাইকযোগে আমাকে কাউন্টারে এগিয়ে দেয়। অপূর্বকে বিদায় জানিয়ে আমি বাসের অপেক্ষা করতে থাকি। যথাসময়ে বাস ছেড়ে যায় ময়মনসিংহ থেকে। বিদায় জানাতে হয় বাকৃবিকে, বিদায় জানাতে হয় ময়মনসিংহের হাসিখুশি মানুষগুলোকে।