তুলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ছিল তুলা চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। ঢাকা জেলার তুলা ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। এ তুলার সুতা থেকেই তৈরী হতো ঢাকাই মসলিন। প্রাচীনকাল থেকেই চীন, ভারত ও মিশরে তুলার ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ তুলা বস্ত্র তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয়। বাকি ২৫ শতাংশ কার্পেট, পর্দা, গৃহস্থালির রকমারি জিনিস তৈরীর জন্য এবং অবশিষ্ট তুলা শিল্পের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তুলার বীজ থেকে তেল ও খৈল পাওয়া যায়। তুলাবীজ থেকে প্রাপ্ত পরিশোধিত তেল ভোজ্যতেল ও অপরিশোধিত তেল সাবান তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুলা বীজের খৈল গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু রোগ বালাই তুলা উৎপাদনের একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে তুলার ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই নিন্মে তুলার মারাত্মক একটি রোগের লক্ষণ, কারন, বিস্তার ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
শিকড় গিট (Root knot) রোগ
রোগের কারণঃ মেলোয়ডোজাইন ইনকগনিটা এবং মেলোয়ডোজাইন যাভানিকা (Meloidogyne incognita & M. javanica) নামক কৃমির দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তারঃ
মেলোয়ডোজাইন প্রজাতির কৃমি মাটিতে বসবাস করে। সাধারণত ২৭-৩০০ সেঃ তাপমাত্রায় হালকা ও বেলে মাটিতে এ রোগ সবচেয়ে বেশী হয়। আক্রান্ত মাটি, শিকড়ের অংশ, বৃষ্টি ও সেচের পানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতির দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণঃ
- মাটির উপর গাছ অনেকটা হলুদ বর্ণের হয়।
- গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও খর্বাকৃতির হয়।
- শিকড়ের আক্রান্ত অংশ ফুলে গিয়ে গিঁট উৎপন্ন করে।
- এই সকল গিঁটের মধ্যে কৃমি ও কৃমির ডিম পাওয়া যায়।
- চারা গাছ আক্রান্ত হলে সমস্ত শিকড় নষ্ট হয়ে যায় ও দিনের বেলায় গাছ ঢলে পড়ে।
- ফুল ও ফল ধারন ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়।
রোগের প্রতিকারঃ
- জমিতে সরিষা, বাদাম, গম, ভূট্টা প্রভৃতি শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
- জমি প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের কৃমি মারা যায়, তাই সুযোগ থাকলে বছরে একবার প্লাবিত করে রাখতে হবে।
- হেক্টর প্রতি ৫ টন অর্ধ পচা মুরগীর বিষ্ঠা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর জমিতে বীজ বপন করতে হবে।
- শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ভালভাবে শুকাতে হবে।
- রোগের লক্ষণ দেখা গেলে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি) অথবা ইসাজোফস (মিরাল ৩জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।
বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব) মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই শিবগঞ্জ, বগুড়া, বাংলাদেশ। মোবাইলঃ ০১৯১১-৭৬২৯৭৮ ইমেইলঃ zaman.path@gmail.com